তিন মাসের ব্যবধানে মশার ঘনত্ব দ্বিগুণ

করোনার ঊর্ধ্বগতির মাঝেই দুঃসংবাদ।। বৃষ্টি হলেই বাড়বে এডিসের প্রজননস্থল

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১০ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আতংকে আছে নগরবাসী। এর মাঝেই দুঃসংবাদ বয়ে আনছে মশা। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে শহরে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। যা জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। অবশ্য বৃষ্টি শুরু হলে কিউলেক্সের ঘনত্ব কিছুটা কমে যাবে। তখন বৃদ্ধি পাবে এডিস মশার প্রজনন স্থান। এতে বাড়তে পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জন কার্যালয় যৌথভাবে গত ৬ মার্চ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত নগরে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব পরিমাপে জরিপ চালায়। সম্প্রতি জরিপ টিমের সদস্যরা প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে মশার ঘনত্ব দ্বিগুণ হওয়ার বিষয়টি ওঠে আসে। এছাড়া এডিসের প্রজনন স্থান বৃদ্ধির বিষয়েও সর্তক করা হয় প্রতিবেদনে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীকে চিঠি দিয়ে জরিপের বিষয়টি অবহিত করেন। এতে মশা প্রতিরোধ এবং জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে ৮ দফা সুপারিশও করা হয়। জরিপ টিমের সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডিসেম্বর মাসে আমরা মশার যে ঘনত্ব দেখেছিলাম মার্চ মাসে জরিপ করার সময় তা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যেখানে আগে ১৪টা পেয়েছিলাম সেখানে ৩০টি হয়ে গেছে। তবে গরম বেশি পড়লে কিউলেক্স মশা কমে যায়। আবার ঠাণ্ডা পড়লেও কমে যায়। তিনি মনে করেন, নিয়ম অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের কীটনাশক ছিটানো কার্যক্রম জোরালো করা উচিত।
প্রতিবেদনে কি আছে : প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় মশার প্রজনন স্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি এ বছর কিউলেক্স মশার ঘনত্ব প্রায় দ্বিগুণ। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, খেলার মাঠ, পার্ক, মসজিদ, রাস্তাঘাট সর্বত্র মশার উপদ্রব অনেকাংশে বেশি। ডিসেম্বর মাসে প্রতি ডিপে লার্ভা পাওয়া যেতো ৮ থেকে ১০টি। যা মার্চ মাসে পাওয়া গেছে ১৫ থেকে ২০টি।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, সূর্যাস্তের পর পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস, জাতিসংঘ পার্ক, ষোলশহর বিপ্লবী উদ্যান, জমিয়াতুল ফালাহ্‌ মসজিদ প্রাঙ্গণ, কাজির দেউড়ি আউটার স্টেডিয়াম চত্বর এলাকা, জামালখান ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বর এলাকা, মাদারবাড়ি রেলওয়ে কলোনি, কলেজিয়েট স্কুল মাঠ, আগ্রাবাদ শিশু পার্ক, মা ও শিশু হাসপাতাল প্রাঙ্গণ এবং মসজিদ কলোনি কম্পাউড এলাকায় কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেশি ছিল। এখানে কিউলেক্স মশার উপদ্রব অতিমাত্রায় বেড়েছে।
এছাড়া পাথরঘাটা, ফিরিঙ্গী বাজার, আলকরণ, কোরবানীগঞ্জ, বলুয়ার দীঘি, পশ্চিম বাকলিয়া, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা, কাতালগঞ্জ, মির্জারপোল, বহদ্দারহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকা, চান্দগাঁও শমসের পাড়া, পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকায় কিউলেক্স মশার লার্ভা সনাক্ত করা হয় এবং লার্ভার ঘনত্ব ছিল আগের চেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বদ্ধ ডোবা, নালা, জলাশয় বা বিল-ঝিলের অপরিচ্ছন্ন পানিতে কিউলেক্স মশা বংশবিস্তার করে। বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী, টিন ক্যান, পেপার কাপ, ডাবের খোসা যত্রতত্র শহরের বিভিন্ন এলাকার ড্রেন-নর্দমা ও জলাশয়ে উপস্থিতি কিউলেক্স মশার প্রজনন সহায়ক।
৮ দফা সুপারিশ : মশা প্রতিরোধে চসিককে আট দফা সুপারিশ করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। এতে বলা হয়, অফিস-আদালত ও বাসাবাড়ির আঙ্গিনা ও আশপাশ এলাকা সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ নিয়মিত ‘আইইসি’ কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলা হয়। ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং কীটনাশক ছিটানোর কার্যক্রম যথাযথভাবে করা হলে কিউলেক্স মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলেও উল্লেখ করা হয়।
বলা হয়, মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বছরব্যাপি জরিপ পরিচালনা করে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা শ্রেয়। মশক নিধনের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশকের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা হলে মশার বংশবিস্তার হ্রাস সহজতর হবে।
লার্ভিসাইড এবং এডালটিসাইড সময়মতো প্রয়োগের সুপারিশ করে বলা হয়, সূর্যোদয়ের পরপর এবং সূর্যাস্তের পূর্বে এডালটিসাইড ছিটানো। এছাড়া দক্ষ মশক নিধন কর্মীর দ্বারা কীটনাশক ছিটানোর সময় মনিটরিং টিম গঠন করে সুপারভিশন জোরদার করার সুপারিশ করা হয়।
চসিকের উদ্যোগ :
চসিকের অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে নিয়মিত কার্যক্রমের বাইরে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। প্রতিদিন চার-পাঁচটি ওয়ার্ডে খাল-নালা পরিষ্কারের পাশাপাশি কীটনাশক ছিটাচ্ছি। ২০ দিন করে তিন দফায় বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম করে কার্যক্রম জোরালোভাবে করছি। আমাদের চেষ্টার কমতি নাই। কিন্তু বিভিন্ন খালা-নালা মেগাপ্রকল্পের কারণে বন্ধ থাকায় জমাটবদ্ধ পানিতে মশার লার্ভা বাড়ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের ৫০ বছর
পরবর্তী নিবন্ধকাস্টমসের রাজস্বে করোনার প্রভাব