মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে স্বাগতম। চট্টগ্রামবাসী আবারো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক নজরে দেখতে অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছে। আজ শনিবার সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। গত ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড মাঠে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতার পর আজ ২৮ অক্টোবর দশ মাসের মাথায় আবার কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত স্বপ্নের ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধন এবং আনোয়ারায় জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীকে বরণে অপার সাজে সেজেছে চট্টগ্রাম। সেজেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতু থেকে শুরু করে পুরো আনোয়ারা। বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর আজকে চট্টগ্রাম আগমন দুই দিক থেকে ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। প্রথমত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত স্বপ্নের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ব দরবারে ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হতে যাচ্ছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র দুই মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম আগমনে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ‘বদলে যাওয়া’ এই নগরীতে শনিবার অনুষ্ঠেয় জনসভা থেকে আগামী নির্বাচনের ওয়াদা হিসেবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর রূপরেখা ঘোষণা করবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের তিনি দেবেন ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা।
আজ শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতেঙ্গা প্রান্তে ‘বঙ্গবন্ধু টানেলের’ উদ্বোধন শেষে আনোয়ারা প্রান্তে কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। আনোয়ারার কোরিয়ান ইপিজেডের ৯ লাখ বর্গফুটের বিশাল মাঠে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থলে সাড়ে ৬ হাজার বর্গফুটের নৌকার আদলে মঞ্চ তৈরি হয়েছে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মাত্র দুই মাস আগে কর্ণফুলীর নদীর তলদেশে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধন এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারায় জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামবাসীকে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প উপহার দেবেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন। একযুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার একের পর এক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে দিয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরে বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভার, বায়েজিদ–মুরাদপুর–লালখান বাজার আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার, স্টেশন রোড–দেওয়ান হাট ওভারপাস, পতেঙ্গা–ফৌজদারহাট মেরিন ড্রাইভ আউটার সিটি রিং রোড, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের আধুনিকায়ন, বায়েজিদ–ফৌজদারহাট বাইপাস রোড নির্মাণ যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল সরকারের।
কর্ণফুলীর তলদেশে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল আজ উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে বিশ্ব দরবারে চট্টগ্রামের ইতিহাস নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছে। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে দোহাজারী–কঙবাজার রেল লাইন। যা আগামী ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। চট্টগ্রামে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার খাল খনন, সংস্কার ও পুনরুদ্ধার করে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগাপ্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানীর রূপ নিয়েছে।
এদিকে আজকের সমাবেশ সফল করতে গত এক মাস ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন–ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এবং উত্তর জেলা ও নগরীর প্রতিটি অলিগলিতে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা, প্রস্তুতি সভা করেছেন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকায় নিজেদের শক্ত অবস্থান প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানান, আগামী ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হয়তো দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম আর নাও আসতে পারেন, তাই এই জনসভা দলের নেতাকর্মীদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই জনসভায় তিনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।
গত এক দশকে চট্টগ্রামের যোগাযোগ অবকাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। নগরীর ভেতরে এবং নগরীর সাথে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ চিত্র পাল্টে দিয়েছে এসব অবকাঠামো।
প্রধানমন্ত্রী পতেঙ্গা অংশে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন শেষে যে সব এলাকা দিয়ে জনসভাস্থলে পৌঁছাবেন এবং জনসভা শেষ করে ফিরে যাবেন সেসব এলাকাকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নান্দনিকভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে তোরণ নির্মাণসহ শোভা পাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের চিত্র, বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন। দেওয়াল লিখনের পাশাপাশি রাতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। নান্দনিক সাজে সেজেছে টানেলের উভয় প্রান্ত। সেজেছে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু থেকে মইজ্জারটেক হয়ে চাতরী–কাফকো সেন্টার। আলোকসজ্জায় সেজেছে টানেলের উভয় পাশ। আজ প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি, প্রশাসন ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
গতকাল সকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং চট্টগ্রামের মন্ত্রী–এমপিসহ চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর জনসভার স্থল কেইপিজেড মাঠ পরির্দশন করে সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে সাংবাদিকদেরকে ব্রিফ করেছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, আমিনুল ইসলাম আমিন, উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমানসহ শীর্ষ নেতারা।
প্রশাসনের সাথে এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আজ শনিবার ২৮ অক্টোবর সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে চট্টগ্রামের নেভালে পৌঁছাবেন। সেখান থেকে তিনি পতেঙ্গা টানেলের প্রবেশ মুখে টানেলের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেইসাথে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদসহ সরকারি ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
খবর নিয়ে জানা গেছে, আনোয়ারায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম, মহানগর ও উত্তর জেলা থেকে প্রায় আড়াই হাজার গাড়ির বহরে (বাস ও ট্রাক) নেতাকর্মীরা আজ সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে জনসভার স্থলে পৌঁছে যাবেন। বিশেষ করে পটিয়া এবং আনোয়ারা থেকে ব্যাপক লোক সমাগম হবে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি সাতকানিয়া– লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী এবং বোয়ালখালী থেকেও ব্যাপক জমায়েতের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজকের জনসভা সফল করার ব্যাপারে পটিয়া থেকে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসীকে বিশ্বের ইতিহাসে যুক্ত করবেন। আমাদের সকলের উচিত প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসন উপহার দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করা। তিনি বলেন, আমার পটিয়া থেকে সাড়ে ৩শ’ বাসে সকাল ৮টার মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ হাজার নেতাকর্মী জনসভাস্থলে পৌঁছে যাবে।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, আজকের সমাবেশের মাধ্যমে জানান দিতে হবে যে চট্টগ্রাম নৌকার ঘাঁটি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকরা এই চট্টগ্রামে কোনো পরাজিত শক্তিকে মাথা উঁচু করতে দেবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আজকের এই সফর চট্টগ্রামবাসীর জন্য ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মীদের যে বার্তা দেবেন সেটা আমাদের সকলের অক্ষরে অক্ষরে পালন করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভার সর্বশেষ প্রস্তুতির ব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আজাদীকে বলেন, আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত লাখো নেতাকর্মী। আজকের জনসভা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেবেন।