সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির সাত আইনজীবীর আদালত অবমাননার মামলার শুনানিকালে তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া এখন বিপদের কারবার। স্বামী–স্ত্রীর ঝগড়াও এখন ফেসবুকে চলে আসে। সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে কিছু বললে আবার রাইটস টু ফ্রিডম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ করার ঘটনায় এই সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এই আবেদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে দুই সপ্তাহ পর আদেশের জন্য দিন রাখা হয়েছে। অভিযোগের মুখে থাকা দুই আইনজীবী দেশের বাইরে থাকায় আদেশের দিন পেছানো হয়। খবর বিডিনিউজের।
অবমাননার অভিযোগ ওঠা আইনজীবীরা হলেন– জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ–সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল। তাদের মধ্যে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। এ ছাড়া কায়সার কামাল ও ফাহিমা নাসরিন মুন্নী দেশের বাইরে রয়েছেন বলে তাদের আইনজীবীরা জানান। বিএনপির আইনজীবী নেতাদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
গত বছরের ১৫ আগস্ট শোক দিবসের আলোচনা সভায় ‘বিচারপতি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেছিলেন, এ সংবিধান হলো আমাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দলিল। বঙ্গবন্ধুর যে রাষ্ট্র–দর্শন, রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক দর্শন–সব দর্শনের প্রতিফলন ঘটেছে এই সংবিধানে। ইদানীং সুষ্ঠু নির্বাচন, বিদেশি প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত–এসব নিয়ে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, গণতন্ত্র চাই। বঙ্গবন্ধুর শোষিতের গণতন্ত্র কী? শুধু ভোট দেওয়াই একমাত্র গণতন্ত্র নয়। ভোট দিয়ে রাজা ও মন্ত্রীর পরিবর্তনই গণতন্ত্র নয়। যে গণতন্ত্র মানুষের ভাতের নিশ্চয়তা, বেকারের চাকরির সংস্থান ও দেশের মানুষের সার্বিক মুক্তি ঘটাতে না পারে– বঙ্গবন্ধু সে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন না।
বিচারপতি ইনায়েতুর বলেছিলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত হবে না, যে ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির উন্মেষ ঘটে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এমন হবে না– শুধু ভোট দিয়েই এখানে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে। সংবিধান রক্ষার যে শপথ নিয়েছি, সে অবস্থায় থেকে মুক্তিযুদ্ধের আবহ ও প্রেক্ষাপট, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ সবকিছু মাথায় নিয়ে বিচারিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের আরেক বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকীও বক্তব্য দেন। তিনি বলেছিলেন, সারা বিশ্বে নির্বাচন হয়– কেউ তাকিয়েও দেখে না, নির্বাচন ঘিরে সব নজর বাংলাদেশের দিকে কেন?
এই বক্তব্যের জের ধরে গত বছরের ২৯ আগস্ট এই দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ করায় বিএনপির ৭ আইনজীবী নেতার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন দায়ের করা হয়। আইনজীবী নাজমুল হুদার পক্ষে এ আবেদন করেন আরেক আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি। সেদিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে যুথি বলেছিলেন, ২০০৫ সালে বিচারপতি আব্দুল মতিন ও বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের মিছিল সমাবেশ না করার নির্দেশ দেন।
গত বছরের ৩০ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণসহ দেশের সব আদালতে কোনো ধরনের মিছিল–সমাবেশ না করার বিষয়ে হাই কোর্টের রায় কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য আইনজীবীদের নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। এরপর গত বছরের ১৫ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ করার ব্যাখ্যা দিতে বিএনপির ৭ শীর্ষ আইনজীবী নেতাকে তলব করে আপিল বিভাগ।