ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের মারধরে আহত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) শিক্ষার্থী মাহাদি জে আকিব আজ (মঙ্গলবার) হাসপাতাল থেকে ছুটি পাচ্ছেন। দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার মাথার হাঁড় সফলভাবে প্রতিস্থাপনের পর গত রোববার অস্ত্রোপচারের সেলাই কাটা হয়। আর কোনো ধরনের জটিলতা না থাকায় মঙ্গলবার তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারের পর আকিব নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। মঙ্গলবার (আজ) আকিবকে রিলিজ দেয়া হচ্ছে বলে এ চিকিৎসক আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৮ মার্চ দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আকিবের মাথার হাড় সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে এ অস্ত্রোপচার চলে। অস্ত্রোপচারে নিউরোসার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের ৮-১০ জন চিকিৎসক অংশ নেন।
এর আগে গত বছরের ৩০ অক্টোবর প্রথম দফা অস্ত্রোপচারের সময় আকিবের মাথার হাড়ের একটি অংশ খুলে তাঁর পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছিল। ২৮ মার্চ দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারে পেটের চামড়ার নিচে রাখা অংশটি বের করে সেটি মস্তিস্কে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম দফায় অস্ত্রোপচারের প্রায় পাঁচ মাস পর সেই হাড় পুনরায় পেট থেকে বের করে মাথায় প্রতিস্থাপন করা হয়।
দুই ভাগে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে জানিয়ে ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী ওই সময় আজাদীকে বলেন, প্রথমে পেটের চামড়ার নিচে রাখা হাড়ের অংশটি বের করা হয়। পরে তা মস্তিস্কে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই অস্ত্রোপচার একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। শেষ পর্যন্ত আমরা চ্যালেঞ্জ জয় করতে সক্ষম হয়েছি।
দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের পর আকিবকে আইসিইউতে (নিবিড় পর্যবেক্ষণে) রাখা হয়। ৫/৬ দিন পর তাকে সেখান থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরীর পর্যবেক্ষণেই কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন আকিব। কেবিন থেকেই আজ বাসায় ফিরবেন মেডিকেল কলেজের এই শিক্ষার্থী। রোববার সেলাই কাটার পর সোমবারও তাকে ফলোআপ করা হয়েছে জানিয়ে ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে তার অস্ত্রোপচার করেছি, সেটা পুরোপুরি সফল বলতে পারি। এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ বলা যায়। কোনো সমস্যা নেই। তাই তাকে ছুটি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। হিসেবে দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের প্রায় ১৫ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন আকিব।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে কয়েকজন আহত হন। বিবদমান দুই গ্রুপের এক পক্ষ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং অপর পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। রাতের ঘটনার জের ধরে ৩০ অক্টোবর দুপুরে মাহাদি জে আকিবের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর চমেকের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
হামলায় আকিবের মাথায় গুরুতর জখম হয়। ওই দিনই (৩০ অক্টোবর) অস্ত্রোপচার করে তাঁর মাথার হাড়ের অংশটি পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়। এ সময় তাঁর মাথা সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো ছিল। তাতে লেখা ছিল ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’। এই ছবি তখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল।











