মজুদ শেষ হওয়ায় চট্টগ্রাম মহানগরের কেন্দ্রগুলোতে করোনার টিকাদান কার্যক্রম সাময়িক ভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যদিও টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে কেদ্রগুলোতে পুনরায় টিকাদান শুরুর কথা বলেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মজুদ থেকে এক হাজার ডোজ পাওয়ায় গত বুধবার থেকে নগরের কয়েকটি কেন্দ্রে সীমিত পরিসরে টিকাদান চালু করা হয়। দিনে একশ জনকে টিকাদানের কথা জানিয়ে চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়- কেবল সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের জন্য এসএমএস প্রাপ্তরাই টিকা পাবেন। এ জন্য এসএমএস না পেলে এবং ভিন্ন কেন্দ্রের টিকাগ্রহীতাকে অযথা কেন্দ্রে ভিড় না করতে অনুরোধ জানান চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। তবে সীমিত পরিসরে টিকাদানের মাঝেও হৈ চৈ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে কেন্দ্রগুলোতে। নগরীর চসিক জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে গতকালও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এসএমএস প্রাপ্ত অনেকেই কেন্দ্রে গিয়ে টিকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। তবে ভিন্ন কেন্দ্রের জন্য এসএমএস প্রাপ্তরাও এসে ভিড় করায় কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি করেন ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। তিনি বলেন- চসিক জেনারেল হাসপাতালে আমরা দিনে ১০০ জনকে টিকা দেয়ার কথা বলেছি। সে অনুসারে এসএমএস পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার (গতকাল) কম হলেও তিন শতাধিক মানুষ ভিড় করেছেন কেন্দ্রে। যাদের অধিকাংশই অন্য কেন্দ্রের জন্য এসএমএস প্রাপ্ত।
অথচ আমরা আগে থেকেই বলে দিয়েছি- কেবল চসিক জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রের জন্য এসএমএস প্রাপ্তরাই এ কেন্দ্রে টিকা নিতে আসবেন। টিকার যেহেতু সংকট, ভিন্ন কেন্দ্রের কাউকে এখন টিকা দেয়া সম্ভব না। এরপরও ভিন্ন কেন্দ্রের মানুষ এখানে ভিড় করছেন। এতে করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। সীমিত পরিসরে এ টিকাদানে সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।
চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে- চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৩০০ জন, চসিক জেনারেল হাসপাতালে ১৪২ জন, চসিক মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতালে ৪০ জন, চসিক বন্দরটিলা মাতৃসদন হাসপাতালে ৫৩ জন এবং সিএমএইচ (সামিরক হাসপাতালে) কেন্দ্রে ১৩০ জনসহ মহানগরের কেন্দ্রগুলোতে মোট ৬৬৫ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে গতকাল। টিকার সংকটে টিকাদান সাময়িক বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে।
সংকটের কারণে বেশ কয়টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে টিকা দেয়া হচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন- শুধু চট্টগ্রামে নয়। সারাদেশেই এখন টিকার সংকট। আমাদের কাছে স্বল্প সংখ্যক টিকা আছে। যার কারণে সীমিত পরিসরে টিকাদান চলছে। সংকটের কারণে চট্টগ্রামের লক্ষাধিক মানুষের ঠিক সময়ে দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, যার কারণে কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়ে টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের মধ্যে সময়ের ব্যবধান যাদের তিন মাস হওয়ার পথে, তাদেরকে টিকাদানে এখন অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক-পুলিশ-সাংবাদিকসহ সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের টিকাদানে এখন অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
আরো ১৭৫০ ডোজ টিকা চট্টগ্রামে : সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী- বর্তমানে সবমিলিয়ে ৭ হাজার ৫০০ ডোজ (৭৫০ ভায়াল) টিকা মজুদ রয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে মহানগরের জন্য মজুদ রয়েছে ১ হাজার ৯৬০ ডোজ (১৯৬ ভায়াল)। তবে আরো ১ হাজার ৭৫০ ডোজ (১৭৫ ভায়াল) টিকা পাচ্ছে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলা। বৃহস্পতিবার (গতকাল) রাতে এ টিকা পৌঁছে যাওয়ার কথা জানান সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। অবশ্য ৮ হাজার ডোজ (৮০০ ভায়াল) টিকা পাচ্ছে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগ। এর মধ্যে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলার জন্য ১ হাজার ৭৫০ ডোজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় ১ লাখ ১৫ হাজার টিকাগ্রহীতা : গত ৮ এপ্রিল থেকে করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদান শুরু হয় চট্টগ্রামে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে- চট্টগ্রামে গতকাল পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৪ জন টিকাগ্রহীতা তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। এর আগে চট্টগ্রামের (মহানগরসহ জেলায়) মোট ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬০ জন মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নেন। হিসেবে প্রথম ডোজ নেয়া আরো ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি টিকাগ্রহীতা দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়- চট্টগ্রামে প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের মাঝে আরো লক্ষাধিক টিকাগ্রহীতা নির্ধারিত সময়ে তাদের দ্বিতীয় ডোজ পাবেন না। আদৌ পাবেন কী না, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। তবে আগামী মাসের মধ্যেই টিকা পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন- আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। যা জুন মাসের মধ্যেই পাওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথম ডোজ গ্রহণের ৩ বা ৪ মাসেও দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যাবে মন্তব্য করে হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধারণের আহবান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।