সাউদার্ন ভার্সিটির কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৩ নভেম্বর, ২০২৫ at ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষক ও কর্মকর্তাকর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ ড. সরওয়ার জাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। এছাড়া এক ব্যক্তির কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ঋণ গ্রহণ না করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে তাকে ঋণ পরিশোধ দেখিয়ে উত্তোলন করে ২৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আত্মসাতের এ ঘটনায় সরোয়ার জাহানের পাশাপাশি নাম রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক রেজিস্ট্রার প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার মো. মোজাম্মেল হকেরও। গতকাল রোববার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ দুজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ আজাদীকে মামলার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০০৭ সালের ১৫ জুলাই সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের ১৪তম সভা হয়। সভায় সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের নামে নগরীর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক প্রবর্তক শাখায় একটি ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ড. সরওয়ার জাহানকে ব্যাংক হিসাব পরিচালনা সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রে সিগনেটরি হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ৩০ জুন ড. সরওয়ার জাহান ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক প্রবর্তক শাখায় একটি হিসাব খোলেন। হিসাবটির স্টেটমেন্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, হিসাবটিতে শুরু থেকে গত বছরের ২২ জুন পর্যন্ত মোট ৬ কোটি ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩০ টাকা জমা করা হয়, যা বিভিন্ন সময়ে সরওয়ার জাহান উত্তোলন করেছেন।

বর্তমানে উক্ত হিসাবে স্থিতি শূন্য উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, শিক্ষক ও কর্মকর্তাকর্মচারীদের কাছ থেকে আদায়কৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড তথা আপদকালীন তহবিল থেকে উত্তোলিত উক্ত ৬ কোটি ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩০ টাকা ড. সরওয়ার জাহান কীভাবে কোন খাতে ব্যয় করেছেন তার স্বপক্ষে কোনো রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে পারেনি। অর্থাৎ তিনি উক্ত ৬ কোটি ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এজাহারে বলা হয়, এছাড়া ড. সরওয়ার জাহান ব্যাংক এশিয়ার অধীনে এজেন্ট সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনা করেন। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি ব্যাংক এশিয়ার অধীনে এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার স্বত্বাধিকারী হলেও উক্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জিত কমিশন বাবদ কোনো অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে জমা করেননি। এছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিয়োজিত কর্মচারী এস এম মুনিউল ইসলামকে ২০২১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন বাবদ ৮৮ হাজার ৭৩৮ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে প্রদান করেছেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং কাজে নিয়োজিত কর্মচারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে বেতন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছেন।

এজাহারে আরো বলা হয়, কোনো ধরনের চুক্তি বা বিওটি বা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ঋণ পরিশোধের নামে মোহাম্মদ ইলিয়াছ নামে এক ব্যক্তিকে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ নামীয় নগরীর এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের মেহেদীবাগ শাখার হিসাবে ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ৫ লাখ টাকা, এসবিএসি ব্যাংকের হিসাবে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ যথাক্রমে ৬ লাখ ৮ হাজার ৯৯০ টাকা ও ৭ লাখ টাকা, এনসিসি ব্যাংকের হিসাবে ২০২১ সালের ১৪ মার্চ ৫ লাখ টাকা, একই বছরের ৩০ মার্চ গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের হিসাবে ৫ লাখ টাকাসহ মোট ২৮ লাখ ৮ হাজার ৯৯০ টাকা টাকা প্রদান করেন ড. সরওয়ার জাহান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সাবেক রেজিস্ট্রার প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার মো. মোজাম্মেল হক। মোহাম্মদ ইলিয়াছকে ঋণ পরিশোধে ব্যবহৃত উক্ত চেকগুলোতে তাদের দুজনের স্বাক্ষর রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে মোহাম্মদ ইলিয়াছকে ঋণ পরিশোধ করা হলেও মোহাম্মদ ইলিয়াছের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ঋণ নেওয়ার কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা প্রমাণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করতে পারেনি। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মোহাম্মদ ইলিয়াছের কাছ থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ না করা সত্ত্বেও দুই আসামি অসৎ উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে মোহাম্মদ ইলিয়াছকে ২৮ লাখ ৮ হাজার ৯৯০ টাকা ঋণ পরিশোধ দেখিয়ে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রামে কন্টেম্পরারি নৃত্য কর্মশালা শুরু
পরবর্তী নিবন্ধলায়ন্স জেলার অক্টোবর সেবা কর্মসূচির সমাপনী ও দ্বিতীয় কেবিনেট মিটিং