সংকটের মাঝেও থেমে নেই গ্যাস চুরি

লোকবল সংকটে প্রয়োজনীয় অভিযান চালানো যায় না আগের মতো চুরি হচ্ছে না : কেজিডিসিএল

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

গ্যাসের সংকটের মাঝেও চট্টগ্রামে কোটি কোটি টাকার গ্যাস চুরির ঘটনা ঘটছে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা গ্যাস চুরির ঘটনা বন্ধের নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও সংঘবদ্ধ চক্রের কারসাজিতে তা ভণ্ডুল হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় গ্যাস চুরির ঘটনা ধরা পড়লেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যাওয়া চক্রটি নতুন করে গ্যাস চুরি শুরু করে। অপরদিকে গ্যাসের চোরচক্র প্রভাবশালী হওয়ায় অধিকাংশ সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। সরকার গ্যাস খাতে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিলেও সংঘবদ্ধ চক্র দিনের পর দিন গ্যাস লোপাট করে চলেছে।

সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে ১৯৮৪ সালে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেড চট্টগ্রামে গ্যাসের বিপণন করে আসছিল। পরে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল) গঠিত হলে চট্টগ্রামে গ্যাস বিপণনের দায়িত্ব এই কোম্পানির উপর ন্যস্ত করা হয়। চট্টগ্রামে বর্তমানে ৬ লাখের বেশি আবাসিক গ্রাহক, ৬৮টি সিএনজি স্টেশনসহ প্রায় তিন হাজার শিল্প গ্রাহক এবং তিন হাজারের মতো বাণিজ্যিক গ্রাহক গ্যাস ব্যবহার করে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গ্যাস ব্যবহারে চুরি চামারি না করলেও বেসরকারি কোম্পানিগুলোতে গ্যাসের হরিলুট চলে।

চট্টগ্রামে বেশি গ্যাস চুরি হয় শিল্পখাতে। বড় বড় কারখানাসহ সিএনজি স্টেশনগুলোতে কী পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার হয় মিটারের রিডিং হিসাব করে বিল করা হয়। এই মিটার নিয়ে কারসাজি করে কোটি কোটি টাকার গ্যাস লোপাট করা হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে গ্যাস চুরি করছে চট্টগ্রামের বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং সিএনজি স্টেশন। মিটার ঘোরানোর জন্য বিশেষজ্ঞও রয়েছে। এদের মাধ্যমে মিটারের রিডিং পাল্টে দেয়া হয়। বাইপাস লাইন বানিয়েও অনেকে গ্যাস ব্যবহার করে। এই পুরো কার্যক্রমের সাথে কেজিডিসিএলের অনেক অসাধু কর্মকর্তাকর্মচারী জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রেও একইভাবে মিটার ঘুরানো হয়। আবাসিক গ্রাহকের ক্ষেত্রে মিটারের ব্যাপার না থাকলেও অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে চলে গ্যাস চুরি। বিশেষ করে বস্তি এবং বহুতল ভবনগুলোতে নির্দিষ্ট সংখ্যক চুলার অনুমোদন নিয়ে বাড়তি সংযোগ দিয়ে বাড়তি চুলা জ্বালানো হয়।

অতীতে বিভিন্ন সময় অভিযানের মাধ্যমে বহু শিল্প, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক গ্রাহকের গ্যাস চুরির ঘটনা উদঘাটন করা হয়েছে। তবে বেশ কিছুদিন যাবত এই ধরনের অভিযান বন্ধ রয়েছে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, প্রয়োজনীয় লোকবল এবং যানবাহনের অভাবে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল) প্রয়োজনীয় অভিযান পরিচালনা করতে পারছে না।

গ্যাস চুরি ঠেকানোর ক্ষেত্রে প্রিপেইড মিটার অনেকটা রক্ষাকবচের ভূমিকা নিয়েছে। গ্যাসের আবাসিক সংযোগের যেসব স্থানে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে সেখানে গ্যাস চুরি শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। নগরীর ৬ লাখের বেশি আবাসিক গ্রাহকের মাঝে ৬০ হাজারের বেশি গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে। বর্তমানে নতুন করে এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ চলছে। প্রিপেইড মিটার পুরোপুরি স্থাপিত হলে আবাসিক খাতে গ্যাস চুরি বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছে কেজিডিসিএল।

শিল্প এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের গ্যাস চুরির কথা স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, এদেরকেও প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা গেলে গ্যাস চুরি পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হতো। তবে তা অনেক ব্যয় এবং সময়সাপেক্ষ।

সরকার প্রচুর টাকা ভর্তুকি দিয়ে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করে। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে সরকারের গড় ভর্তুকির পরিমাণ ৩৫ টাকার বেশি। বিপুল অর্থ খরচ করে আনা গ্যাস লোপাট হওয়া ঠেকানোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগের মতো ঢালাওভাবে গ্যাস চুরি হচ্ছে, তা বলা যাবে না। আমাদের মিটারিং সিস্টেম অনেক উন্নত করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার দেয়া গাইডলাইন অনুসরণ করে এখন বড় বড় শিল্প কারখানা, সিএনজি স্টেশন এবং ক্যাপটিভ পাওয়ার স্টেশনসহ বিভিন্ন শিল্প গ্রাহকের লাইনে ইভিসিযুক্ত টারবাইন মিটার স্থাপন করা হয়েছে। যাতে আমরা তিন মাসের রিডিং নিতে পারি। এই মিটারে টেম্পারিং করে গ্যাস চুরির সুযোগ নেই। বড় বড় প্রায় সব শিল্প কারখানায় এই মিটার লাগানো হয়ে গেছে। গ্যাস চুরি কমে গেছে। সিস্টেম লসও কমে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএসএসসির কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন না শিক্ষামন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধচবিতে শিক্ষক সমিতির কর্মবিরতি পালন