শীত বাড়ায় সাগরে উধাও ইলিশ

কক্সবাজার থেকে মাত্র ৪ মেট্রিক টন গেল ঢাকায়

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার | সোমবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১১ পূর্বাহ্ণ

শীত বাড়ার সাথে সাথে ইলিশ প্রায় উধাও হয়ে গেছে কক্সবাজারের উপকূলীয় বঙ্গোপসাগর থেকে। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজারে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে খুব কম। অন্যান্য মাছের অবস্থাও প্রায় একই। গতকাল রোববার কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটে আসা মাত্র ৪ মেট্রিক টন ইলিশ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও এখান থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ মেট্রিক টন ইলিশ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরেই সাগর থেকে ফিশারীঘাটে ইলিশ আসার হার ব্যাপকভাবে কমতে শুরু করে। আর গত ৪/৫ দিন ইলিশ আসছে দৈনিক মাত্র ৪ থেকে ৫ মেট্রিক টন করে। যা দিয়ে একটি ট্রাকও বোঝাই করা যাচ্ছে না। অথচ গত ২০ জানুয়ারি এখান থেকে ৪টি ট্রাকে প্রায় ৩২ মেট্রিক টন ইলিশ ঢাকায় পাঠানো হয় বলে জানান ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী।

তিনি বলেন, শীত বাড়ার সাথে সাথে কক্সবাজার উপকূল থেকে ইলিশ প্রায় উধাও হয়ে গেছে। এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজারে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে খুব কম। আর যা ধরা পড়ছে তাও আকারে খুব ছোট। ৬/৭টি ইলিশে হয় এক কেজি। গতকাল রোববার সাগর থেকে ইলিশ ধরে ফিশারীঘাটে ফিরেন শহরের বিমানবন্দর সড়কের বাসিন্দা ওসমান গণি টুলু, শওকত ওসমান ফারুক ও জানে আলম পুতুর ‘ইলিশ জালের বোট’। তবে তাদের ট্রলারে মাত্র দেড়শ থেকে ২শ কেজি করে ইলিশ পাওয়া গেছে। বোট মালিক শওকত ওসমান ফারুক বলেন, সাগরে একেকটি বোট ৮/১০ দিন মাছ ধরে মাত্র একশ থেকে দেড়শ কেজি করে ইলিশ পেয়েছে। তাও আকারে ছোট। অনেক বোট টানা দুই সপ্তাহ ধরে সাগরে মাছ ধরেও প্রায় খালি হাতে ঘাটে ফিরছে।

ফিশারী মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি জানে আলম পুতু বলেন, গত অক্টোবর মাসে সাগরে মাছ ধরার উপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার পর বঙ্গোপসাগর থেকে গত তিন মাসে গড়ে ৭/৮ টনের বেশি ইলিশ আসেনি। তবে গত সপ্তাহে চার দিন ধরে দৈনিক গড়ে ৩০ টনের বেশি আসে। কিন্তু মাছগুলো আকারে ছোট।

জেলেরা জানান, বঙ্গোপসাগরে গত ৩ মাস ধরে ভাসা জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়ছে না। তাই অনেক জেলে কম ফাঁসযুক্ত তাইল্যা জালের দিকেই ঝুঁকে পড়েন। বর্তমানে ফিশারীঘাটে আসা ৮০% ভাগ ইলিশই তাইল্যা জালে ধরা পড়া। বাকী ২০% ভাগ ইলিশ ধরা পড়েছে ভাসা জালে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে তাইল্যা জালেও ইলিশ ধরা পড়ছে না বলে জানান জেলেরা।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান মনে করেন, আবহাওয়াগত কারণে বঙ্গোপসাগরে ঘন কুয়াশা থাকায় সাগরে ইলিশ ধরা কম পড়ছে। আবার জেলেরাও মাছ ধরতে সাগরে এখন কম যাচ্ছে। অথচ এখন পূর্ণিমার জো থাকায় সাগরে বেশি ইলিশ ধরা পড়ার কথা।

কক্সবাজার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির মতে, কক্সবাজারে ছোটবড় ৭ সহস্রাধিক যান্ত্রিক বোট রয়েছে। এরমধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং তাইল্যা জালের বোটগুলো এক সপ্তাহের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। আবার ‘ফইল্যা জালের’ বোটগুলো সাগরে মাছ ধরতে যায় ৫/৬ দিনের রসদ নিয়ে। এই বোটগুলো রূপচান্দা জাতীয় মাছ ধরে। এছাড়া চাউপ্পা জাল, ডোবা জাল, চামিলা জাল ও চোখফোলা জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে যায় এবং মাছ ধরে দিনে দিনেই ফিরে আসে। এই ধরনের জালের বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। বোটগুলোতে একেক মৌসুমে একেক প্রজাতির মাছ বেশি ধরা পড়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১০২ যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম ছাড়ল এয়ার এরাবিয়ার সেই ফ্লাইট
পরবর্তী নিবন্ধচবি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে শিক্ষক সমিতি