শিক্ষা নীতি ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিবর্তনের আহ্বান

৪০ জন বিশেষজ্ঞের সুপারিশমালা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

দেশের শিক্ষা নীতি ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং (ইউএসটিসি) ও ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি পেট্রোনাস মালয়েশিয়ার যৌথ আয়োজনে ‘মুজিব শতবর্ষ’ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে বিশেষজ্ঞরা এ দাবি জানিয়েছেন। জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট অব ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিভল্যুশনের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিভল্যুশন-২০২০’ শীর্ষক কনফারেন্সটি ২০২০ সালের ৫ ও ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সে অংশ নেয়া দেশি-বিদেশি ৪০ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে একটি সুপারিশমালা (রিকমেন্ডেশন) প্রণয়ন করা হয়েছে। এ সুপারিশমালা তুলে ধরতে গতকাল সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইউএসটিসি।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন ইউএসটিসির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। অন্যান্যের মাঝে ইউএসটিসির উপ উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. নুরুল আবছার, ট্রেজারার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. কামরুল হাসান, ব্যবসায় অনুষদ প্রশাসনের ডীন ড. সৈয়দ আলী ফজল, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) দিলীপ কুমার বড়ুয়া, প্রক্টর ইঞ্জি. কাজী নুর-ই-আলম সিদ্দিকী, ইউএসটিসির আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক ডা. শুভ্র প্রকাশ দত্ত প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, ২০৪১ সালে সব ক্ষেত্রে এতটা পরিবর্তন আসবে যে, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা কোন কাজে আসবে না। এখন যারা আর্টস পড়ছে, সাইয়েন্স পড়ছে; তারা ব্যবসায় বুঝছেন না। কিন্তু ব্যবসা সবার জন্যই। ব্যবসায়-ব্যবস্থাপনার জ্ঞানটা সকলের থাকা উচিত। আমরা ইউএসটিসিতে মেডিকেল ডাক্তারদের জন্য এমবিএ চালু করতে যাচ্ছি। আবার অনেকেই তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পিছিয়ে। কিন্তু বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তি ছাড়া কোন কিছু কল্পনাও করা যায় না। যার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। প্রণীত সুপারিশমালা শিক্ষা, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামগ্রিক ও সুষ্ঠু উন্নয়নের স্বার্থে পাঁচটি ধারায় ভাগ করার কথা জানিয়ে উপাচার্য বলেন, এই পাঁচ ধারার মধ্যে রয়েছে (১) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (২) প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান (৩) কলা, মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান এবং শিক্ষা (৪) অর্থনীতি, ব্যবসা, ব্যবস্থাপনা ও অর্থ ও (৫) জৈব, বিজ্ঞান, ঔষধ এবং ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণা।
লিখিত বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, একটি ডিজিটাল অর্থনীতি প্রণয়নের জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্বয়ংক্রিয় শিল্প ও উৎপাদন স্থাপনের লক্ষ্যে অপরিহার্যভাবে উদীয়মান প্রযুক্তির দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ দক্ষ জনশক্তি বিকাশের নিমিত্তে প্রতিটি জেলা এবং উপজেলা এলাকায় ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত বা প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এমন আইসিটি বিজনেস ইনকিউবেটরস, আইটি ভিলেজ, আইটি পার্ক এবং টেকনোলজি পার্কগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে ডিজিটাল অর্থনীতি প্রণয়নের লক্ষে বিগ ডেটা, এআই এবং এমএল প্রভৃতি উদীয়মান প্রযুক্তি এবং জীব বৈচিত্র্যেও সংশ্লিষ্ট উপাত্ত গ্রহণ করে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণকে আরও ভালভাবে বোঝার জন্যে এআই, রোবেটিঙ, ড্রোন প্রযুক্তি এবং আইসিটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলিকন ন্যানোয়ার, ফোটোনিক ক্রিস্টাল ফাইবার ইত্যাদি নিয়ে ন্যানো টেকনোলজির গবেষণার জন্য একটি মনিটরিং কেন্দ্র সুপারিশ করা যেতে পারে। প্রতিটি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি রিনিউবেল এনার্জি ল্যাব সুপারিশ করা। সকল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং বৃক্তিমূলক ইনস্টিটিউটের সমস্ত ব্যবহারিক ল্যাবগুলো আধুনিকীকরণ এবং উন্নতদেশের মতো প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তরিত করা এবং প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শিক্ষণ ও গবেষণা ঠখঝও ল্যাব সুপারিশ করা।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের ভিত্তির ওপর শুরু হওয়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে সবকিছুর পরিবর্তন হচ্ছে গাণিতিক হারে, যা আগে কখনও হয়নি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি বিপ্লব। বিশ্বের প্রতিটি দেশের, প্রতিটি খাতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এ পরিবর্তন প্রভাব ফেলছে, যার ফলে পাল্টে যাচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা। স্মার্টফোনের মাধ্যমে সারাবিশ্বের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের পরিবর্তন, যন্ত্রপাতি পরিচালনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ, রোবটিকস, জৈবপ্রযুক্তি, কোয়ান্টাম কমিপউটিংয়ের বহুল ব্যবহার আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে এক নবতর জগতকে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে ডব্লিউইএফ (বিশ্ব অর্থনীতি ফোরাম)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী প্রধান ক্লাউস শোয়াব ভবিষ্যদ্বাণী করছেন যে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আগাম ফসল হিসেবে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ১০ শতাংশ মানুষের পরিধেয় বস্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে ইন্টারনেট। ১০ শতাংশ মানুষের চশমার সঙ্গেও ইন্টারনেট সংযুক্ত থাকবে। পাওয়া যাবে মানুষের শরীরেও স্থাপনযোগ্য মোবাইল ফোন। ৯০ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করবে। আমেরিকায় ১০ শতাংশ গাড়ি হবে চালকবিহীন। ৩০ শতাংশ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের অডিট হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসমপন্ন অডিটর দিয়ে। এমনকি কোমপানির বোর্ডের এক পরিচালক হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমপন্ন রোবট। আমেরিকায় এসে যাবে রোবট ফার্মাসিস্ট।
উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশকে তথ্য প্রযুক্তি মনষ্ক করে গড়ে তুলতে হবে। এমন একটি তথ্য প্রযুক্তির দক্ষ প্রজন্ম তৈরি করতে হবে, যাতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাব মোকাবেলা করতে পারে। দক্ষ মানবসমপদ সৃষ্টি করতে পারলেই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে আমরা সঠিকভাবে এগুতে পারব। তাহলেই অতিরিক্ত কর্মক্ষম জনমানবকে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যাবে। দক্ষ ও উপযোগী মানবসমপদ তৈরি করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এ ব্যাপারে দেশময় কারিগরি শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। প্রযুক্তি নির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় দক্ষ মানুষ ছাড়া অন্য কোন উপায়ে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব নয়। প্রযুক্তি নির্ভরতা ছাড়া আমাদের বহুল আলোচিত স্বপ্ন-ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ কোনটিই অর্জন সম্ভব নয়। এরই ধারাবাহিকতায় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি চিটাগাং (ইউএসটিসি) বিশ্ববিখ্যাত মালয়েশিয়াস্থ ইউটিপি, ইউটিএম ও ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একযোগে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা, ব্যবসা ও কারিকুলাম-এর উন্নয়ন ও সহযোগীতার বিস্তৃত করার লক্ষে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগানেই শত বছর বাঁচতে চান সাব্বির
পরবর্তী নিবন্ধ১ নভেম্বর থেকে ক্যাবল অপারেটিং সিস্টেম ডিজিটাল করার সিদ্ধান্ত