রসমালাই ও সন্দেশ

সুজন সাজু | বুধবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২৩ at ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বেশ সাজানো গোছানো পণ্যশালাটি। পরিপাটি শোকেসে সব মিষ্টান্ন। সারিবদ্ধ ভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

মালিকের আদেশ, যেন মশা মাছি প্রবেশ করে মিষ্টান্নের উপর বসতে না পারে। কর্মচারীও সবসময় সতর্ক থাকে। মশা মাছি বা কোন ধরনের পোকা মাকড় যদি মিষ্টান্নের উপর বসতে দেখে তাহলে গ্রাহকরা ক্রয় করা থেকে বিমুখ হবে। বদনাম হবে পণ্যশালার।

এমন যত্ন আত্তিতে শোকেসে থাকতে পেরে কতই না খুশি মিষ্টানগুলো। এত মিষ্টান্নের ভিড়ে রসমালাই আর সন্দেশ দু’জনের অহংকার সীমাহীন। রসমালাই বলে এই শোকেসে আমিই সেরা। আবার সন্দেশ বলে আমিই সেরা। দু’জনের বাড়াবাড়ি অন্যদের অসহ্য করে তোলে। অনেকে নীরব ভূমিকা পালন করে তর্ক থেকে দূরে থাকতে।

এদের তর্কের কারণ, গ্রাহকদের কাছে রসমালাই আর সন্দেশের চাহিদা একটু বেশি। এজন্য এরা এমন আত্মগৌরব পোষণ করে। গ্রাহকরা যে শুধু রসমালাই আর সন্দেশ ক্রয় করে তা নয়, অন্য মিষ্টান্ন গুলোও ক্রয় করে। তবুও এরা কোন রকম আত্মগৌরব করে না। সবাই চুপচাপ শোকেসে যেমন রাখে তেমনি থাকে।

এরা জানে এবং বুঝেও এই শোকেসে সবাই অস্থায়ী, এটা এক ঘন্টাও হতে পারে আবার একদিনও হতে পারে। গ্রাহক ক্রয় করে নিয়ে খেয়ে ফেললেই আমরা শেষ। তাহলে কিসের এতো আত্মগৌরব বা বাড়াবাড়ি ? তবুও বাড়াবাড়িটা শোনা যায় রসমালাই আর সন্দেশের মধ্যে।

অন্যরাও যেমন জিলাপী, নিমকি, আমৃতি, পাটালি, বাতাসা, মণ্ডা, খাজা, রাঘবসাই, রসগোল্লা,চমচম সহ বিভিন্ন প্রকৃতির মিষ্টান্ন সাজানো থাকে শোকেসে। ওদের যেমন ভাবে সাজিয়ে রাখে তেমনি চুপচাপ থাকে। ভেজালটা শুধু রসমালাই আর সন্দেশে। রসমালাই বলে, আমাকে যেমন তেমন লোকে ক্রয় করে না। অনেক ধনী উচ্চশ্রেণীর লোকেরা বড় বড় অনুষ্টানে আমাকে কিনে নিয়ে যায়। আনন্দ উল্লাস করে খায়। তখন আমার কত ভালো লাগে।

প্রতি উত্তরে সন্দেশও থেমে নেই, আরে চুপ থাকো। তুমি জানো না, তুমি রসমালাইকে ধনীরা কিনলেও আমাকে কিনে সবচেয়ে বড় ধনীরা এবং যেমনতেমন লোকেরা আমাকে কিনতে সাহসও করে না। সুতরাং আমার সাথে লাগতে এসো না। তুমি রসমালাই আমি সন্দেশের সমতুল্য হওয়ার চেষ্টা করো না, কখনো হবেও না। তোমার জায়গায় তুমি আমার জায়গায় আমি। সন্দেশের এমন কর্কশ কথা শুনে রসমালাই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠল। সন্দেশের উদ্দেশে বলে তুমি কার সাথে তর্ক করছো ভালো করে জানো ?

একথা শুনে সন্দেশ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। অট্টহাসি দেখে যেন এখনই তেড়ে আসবে মারতে রসমালাই । রসমালাইর রাগ দেখে সন্দেশ হাসতেই থাকে।

দু’জনের ঝগড়া দেখে শোকেসের অন্য মিষ্টান্নরা খুব বিরক্তিবোধে ভুগছে। নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে এদের জন্য কি আমরা একটু শান্তিতেও থাকতে পারবো না ? সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দু’জনকে থামাতে হবে। না হয় দু’জনকে অন্য শোকেসে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

এত আরামে গোছানো শোকেসে ভালো রকমে সেজে থাকতে এদের ভালো লাগছে না। ওরা বুঝতে চায় না যে, আমরা এখানে মাত্র দুয়েক দিনের অতিথি। কখনো কয়েক ঘন্টার। তারপর আমরা কারো না কারো পেটে চলে যাব। কিসের এত বড়াই ?

যদি না বুঝো তাহলে তোমাদের বাইরে রাখার বন্দোবস্ত করতে হবে যেন মশা মাছি গায়ে বসে নোংরা করে দিতে পারে। সব মিষ্টান্ন মিলে শেষ বারের মতো শাসিয়ে দেয়, কোন ধরনের ঝগড়া ফ্যাসাদ আমরা এই শোকেসে চাই না। কে বড় কে ছোট কে দামী এই ধরনের বাড়াবাড়ি এখানে চলবে না। সবার একতাবদ্ধ সুর দেখে রসমালাই, সন্দেশ ভয় পেয়ে গেল।

ওরা নিজেরাই ভাবতে লাগলো, আসলেই তো আমরা যেভাবে প্রতিদিন ঝগড়াতে লিপ্ত থাকি এগুলোর কোন মানে হয় না। এক ঘন্টারও তো বিশ্বাস নেই। সবাই মিলেমিশে থাকলে শান্তিতে থাকা যায়। আজ আছি তো কাল নেই। বুঝতে পারে রসমালাই আর সন্দেশ। শোকেসের সব মিষ্টান্ন বলাবলি করছে, দেখলে ? ঐক্যবদ্ধের বিকল্প নেই। হোক ধনী,হোক না শয়তান।

একথা ঠিক যে, একতাবদ্ধ হলে যেকোন শক্তি মাথা নোয়াতে বাধ্য হবে এটাই প্রমাণিত। সুতরাং যেকোন স্থানে যেকোন সময়ে একতাবদ্ধ থাকতে হবে আমাদের সকলের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালোবাসি আমি
পরবর্তী নিবন্ধএল নিনো ও লা নিনা