সরিষা ও তরমুজের পর এবার পেঁয়াজ চাষে বিপ্লব ঘটেছে কৃষি প্রধান মীরসরাই উপজেলায়। উপজেলায় এবার প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়াজ চাষে সফল হয়েছেন বিমল চন্দ্র দাশ ও সেবিকা রানী দাশ দম্পতি। আগামীতে চাষের পরিধি আরও বাড়াবেন তারা। তাদের হাত ধরেই এ অঞ্চলে পেঁয়াজ চাষের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। আরো কয়েকটি গ্রামে এই পেঁয়াজ চাষের বিপ্লব যেন অপেক্ষা করছে। বিশেষ করে মঘাদিয়া ও সাহেরখালীর উপকূলের কয়েকটি গ্রামে পেঁয়াজ চাষে এসেছে বৈপ্লবিক সম্ভাবনা। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ইছাখালী ইউনিয়নের চরচশরত এলাকায় ১৫০ শতক জমিতে প্রথমবারের মতো পেঁয়াজ চাষে আশা বুনছেন এই কৃষক দম্পতি। বিমল এক সময় বিভিন্ন দেশে বাগানে কাজ করেছেন শ্রমিক হিসেবে। দেশে ফিরে বাবার রেখে যাওয়া জমি ও কিছু বর্গা জমি নিয়ে পুরোদমে শুরু করেন কৃষিকাজ। তার অন্যতম সহযোগী স্ত্রী সেবিকা রানী দাশ। এভাবে আরো অনেকে এগিয়ে এসেছেন পেঁয়াজ চাষে। আর এতে সফলও হয়েছেন তারা। পেঁয়াজের অভাব দূর করতে মীরসরাই যেন নতুন সম্ভাবনা। সরেজমিনে ইছাখালীর চরশরৎ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, জমি থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন করছেন বিমল চন্দ্র দাশ ও সেবিকা রানী দাশ দম্পতি। চাষাবাদ যেন তাদের ধ্যান–জ্ঞান। স্বামীকে সব সময় সহযোগিতা করেন স্ত্রী। তাদের উৎপাদিত একেকটি পেঁয়াজের ওজন ১০০ থেকে ১২০ গ্রাম। কৃষক বিমল চন্দ্র দাশ জানান, গত বছর অল্প জমিতে মাত্র ৭ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেন। এতে আয় করেন ৩০ হাজার টাকা। এ বছর প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছেন। তার কাজে সহযোগিতা করেন স্ত্রী। পাশাপাশি মাছ, পোল্ট্রি মুরগি পালন, রসুন, চাল, সরিষা, ডাল, মরিচ, আলু এবং মৌসুমি সবজি চাষ করেন তারা। সেবিকা রানী দাশ বলেন, কৃষি আমাদের সব। স্বামী–স্ত্রী মিলে চাষাবাদ করছি। বাজার থেকে কিছু কেনার প্রয়োজন হয় না। সব জমিতে উৎপাদন হয়। আমরা উৎপাদিত বিভিন্ন জিনিস বাজারে বিক্রি করি। এরই মধ্যে জমি থেকে পেঁয়াজ তোলা শুরু হয়েছে। বেশ ভালো ফলন হয়েছে। বাজারমূল্য ঠিক থাকলে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছি। মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, উপজেলায় সাধারণত পেঁয়াজ খুব ভালো হয় না। গত বছর মসলা উন্নত জাত সমপ্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কিছু পেঁয়াজ বীজ দিয়েছিলাম। তারা সফল হয়েছেন। এ বছর বিমল দাশ নিজ উদ্যোগে তাহিরপুরী পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তারা মোটামুটি সফল পেঁয়াজ চাষি। তাদের দেখে অনেক কৃষক পেঁয়াজ চাষের দিকে মনোযোগী হবেন এমনটা প্রত্যাশা করছি। উল্লেখ্য, এবার মীরসরাইয়ে সরিষা ও তরমুজের ব্যাপক বাম্পার ফলন হয়েছে। একই সাথে আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় এই পেঁয়াজ চাষের সম্ভাবনা যেন নতুন দীগন্তের সূচনা জেগেছে।