বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) অংশীদারি প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) কেনা দুটি লিফট আড়াই বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে নগরীর খুলশী থানাধীন নাসিরাবাদের ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজে। লিফট দুটি ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হচ্ছে নিশ্চিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় আদালতে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয় এসএওসিএল। প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ সভায় প্রায় এক মাস আগে সিদ্ধান্ত হলেও এখনো মামলা হয়নি।
বিদ্যুৎ জ্বালানি অডিট অধিদপ্তরের অডিট আপত্তি সূত্রে জানা গেছে, এসএওসিএল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে আনা ৪১ লক্ষ ৭২ হাজার ৪শ টাকা মূল্যের লিফটের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে এসএওসিএলের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসার পর এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি লিফট প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে। অন্য দুটি লিফটের বিষয়ে জানতে বন্দর থেকে খালাসকারী সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান হট-লাইন কার্গো ইন্টারন্যাশনাল ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশি এজেন্ট ও-২ এলিভেটরস কো. লিমিটেডকে ৮ জুন চিঠি দেয় এসএওসিএল। সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানটি এসএওসিএলের চিঠির বিষয়ে সাড়া না দিলেও চিঠির জবাব দিয়েছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও-২ এলিভেটরস কো. লিমিটেড। খুলশী থানাধীন নাসিরাবাদ এয়াকুব ফিউচার পার্কের ২ নং গেটের ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজে লিফট দুটি স্থাপন করা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে জানানো হয়। পরবর্তীতে আজাদীর অনুসন্ধানে লিফট দুটি ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজে স্থাপনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। এ নিয়ে ১৯ জুলাই আজাদীতে ‘সরকারি টাকায় কেনা লিফট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে; এসএওসিএলের আমদানি করা ২৮ লাখ টাকার দুটি লিফট ব্যবহৃত হচ্ছে বেসরকারি টেকনিক্যাল কলেজে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর ৪ নভেম্বর এসএওসিএলের ৪১২তম পর্ষদ সভায় লিফট দুটি আত্মসাতের বিষয়ে ফৌজদারী, দেওয়ানী উভয় আদালতে মামলার সিদ্ধান্ত হয়। পর্ষদ সভার সিদ্ধান্তে (নং ১১.২:খ) উল্লেখ করা হয়, দুটি লিফটের অর্থ বাবদ ২৮ লাখ ৫৫ হাজার ৭শ টাকা আদায়ের লক্ষ্যে ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজ চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে একটি রেগুলার মামলা স্থানীয় থানায় দায়ের এবং অপর মামলাটি পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি এ্যাক্ট ১৯১৩-এর আওতায় জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামের অনুকূলে দায়ের করার প্রস্তাব পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত হলো।
১৫ নভেম্বর এসএওসিএলের আইন উপদেষ্টা মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ও কনিষ্ট কর্মকর্তা (ভ্যাট-কাস্টম) মো. শামীমকে চিঠি দেন প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ। পত্রে উল্লেখ করা হয়, পর্ষদ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৫-১১-২০২১ তারিখের মধ্যে আবশ্যিকভাবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের পূর্বক মামলার কপি নিম্নস্বাক্ষরকারীর নিকট দাখিলের জন্য অনুরোধ করা হলো। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা হয়নি।
এ ব্যাপারে এসএওসিএলের আইন উপদেষ্টা মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন আজাদীকে বলেন, মামলার জন্য এসএওসিএলের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও মামলা করার জন্য যেসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন সেগুলো এখনো যোগাড় হয়নি। তারপরও আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ফাইনালি অফিসিয়াল চিঠি দিয়েছি। কারণ তাদের কাছ থেকে ফাইনাল জবাব না পেলে মামলা দায়ের করতে পারব না। মামলাটি দুদক আইনে হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান মহোদয়ের (বিপিসি চেয়ারম্যান) নির্দেশনা রয়েছে, মামলাটি যাতে নির্ভুল হয়। কোন আইনে হবে সে বিষয়টি আমরা ফর্মুলেট করছি। তবে মামলা করতে আর কত সময় লাগতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে বিপিসি ও এসএওসিলের পরিচালক কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক আজাদীকে বলেন, সর্বশেষ সভায় লিফট দুটির বিষয়ে মামলা না হওয়া নিয়ে কথা হয়েছিল। সভায় আইন উপদেষ্টা বলেছিলেন তিনি এখনো প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যোগাড় করতে পারেননি। সরকারি অডিট অধিদপ্তরের দালিলিক আপত্তি ও মামলার দায়েরের সময় বেঁধে দেওয়ার পরেও মামলা না হওয়া নিয়ে তিনি বলেন, মামলা দায়ের নিয়ে আইন উপদেষ্টার গড়িমসি আছে কিনা সেটি নিশ্চিত বলা যাবে না। তবে আগামী সভায় এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টার ব্যাখ্যা চাইব।