মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় ঝরলো মোটর সাইকেল আরোহী চারজনের প্রাণ। গতকাল শুক্রবার মীরসরাই ও চকরিয়ায় মহাসড়কে পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
আমাদের মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, গ্রামের বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গণে একই আঙ্গিনায় একই সাথে শেষকৃত্যানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তিন বন্ধুকে অন্তিম বিদায় দিল স্বজন ও গ্রামবাসী। মীরসরাই উপজেলার মায়ানী বড়ুয়াপাড়া গ্রামে গতকাল শুক্রবার ভোররাত থেকে দিনভর ছিল শোকের মাতম।
ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই সদর সংলগ্ন এলাকায় দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী ৩ বন্ধুর প্রাণ গেল মর্মান্তিকভাবে। শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে মীরসরাই সদরের লতিফীয়া গেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, মীরসরাইয়ের মায়ানী বড়ুয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা সভ্যরঞ্জন বড়ুয়ার ছেলে ও মায়ানী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য রুবেল বড়ুয়া (৪০), একই গ্রামের বাসিন্দা মেঘল বড়ুয়ার ছেলে নিপু বড়ুয়া (৪৩) ও সুরেশ বড়ুয়ার ছেলে সানি বড়ুয়া (৩৭)।
নিহত রুবেল বড়ুয়ার ভাই বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘রুবেল, সানি ও নিপু আমাদের একই গ্রামের কাছের বন্ধু ছিলেন। গতকাল রাতে তাঁরা কোনো এক বিয়ে বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেয়ে ফিরছিল। সুফিয়া রোডের একটি হোটেলে নাস্তা করে চট্টগ্রামমুখী লেনে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। লতিফীয়া গেট সংলগ্ন এলাকায় হঠাৎ তাঁদের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পড়ে। অজ্ঞাত একটি বাস তাদের নির্মমভাবে চাপা দিয়ে চলে যায়। একই সঙ্গে তিনবন্ধুর প্রাণ যায় ঘটনাস্থলেই। একসঙ্গে তিন বন্ধুর মৃত্যুতে পরিবারে ও গ্রামে মাতম চলছে।’ গ্রামের বৌদ্ধমন্দির প্রাঙ্গণে তিন বন্ধুর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো।
মায়ানী ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আশরাফ উদ্দিন জানান, তাদের মধ্যে রুবেল বড়ুয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। দুপুরে বৌদ্ধ মন্দিরে তাদের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে স্বজনদের সমবেদনা জানাতে যান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী সহ বিএনপির নেতৃবৃন্দ। এসময় উপস্থিত ছিলেন মায়ানী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক নুর হোসেন, সাহেরখালী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মাঈনুদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি সামসুল হুদা খানসাব, উপজেলা জাসাস সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাবুল, মুসলিম উদ্দিন, আইয়ুব খান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল, শাহাদাত হোসেন সাগর প্রমুখ। বিএনপি নেতৃবৃন্দ নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেলের তিন আরোহীর মৃত্যু হয়। নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া মোটরসাইকেলটি আমরা হেফাজতে নিয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, আর মাত্র তিনদিন পরে বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল যুবক হুমায়ুন কবির নোমানের (২৫)। কিন্তু তার আগেই গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ডুমখালী রাস্তার মাথায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন মোটরসাইকেল আরোহী এই যুবক। নিহত নোমান ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বালুরচর এলাকার বশির আহমদের ছেলে।
পরিবার সূত্র জানায়, আগামী ২০ জানুয়ারি তার বিয়ের দিন ধার্য ছিল। বিয়ের তিনদিন আগেই মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন তিনি। এনিয়ে এলাকায় ও পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, সকালে কঙবাজারগামী অজ্ঞাত বাসের ধাক্কায় নোমান নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী যুবক নিহত হয়েছেন। খবর পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধারের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘাতক বাস শনাক্ত করে জব্দের চেষ্টা চলছে।