আমি সবাইকে এখনো বলি, তুমি হারিয়ে গেছো হঠাৎ অকারণে অথবা কোনো অজানা অভিমানে। মৃত্যু শব্দটা ঠিক তোমার সঙ্গে যায় না। মৃত্যুতে তো অনেক নিয়ম কানুন আছে। চোখের সামনে অথবা চোখের বাইরে একটা মানুষের চলে যাবার দৃশ্য আছে। ধীরে ধীরে অথবা অকস্মাত প্রাণহীন হতে যাওয়া মানুষটাকে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধরে রাখার চেষ্টার ব্যাপার আছে। তারপর আছে আর না পেরে হেরে যাবার অসহ্য বেদনার চিত্র।
এই নিয়মগুলোর ভেতর দিয়ে যেতে হয়। নয়তো বোঝা যায় না মৃত্যু কী। তোমার লাশ নেই চোখের সামনে। তোমার নিস্তেজ শরীরটাকে অনেক অনেক যত্নে চিরতরে শুইয়ে দেয়া নেই। তোমার গন্ধভরা ওই বাদামী মাটিতে একটা ছোট কাঁঠালচাঁপার গাছ লাগানোর ব্যস্ততা নেই, তবে এটা কি মৃত্যু হলো?
তুমি ছিলে একজন পবিত্র তীর্থযাত্রী। তুমি প্রার্থনা করতে গিয়েছিলে দূরে অনেক দূরে। সবাই বলে যেখানে গেলে নাকি সৃষ্টিকর্তার কাছাকাছি হওয়া যায়। তুমি সেখানে গিয়েছিলে। আমাদের সকলের মঙ্গল প্রার্থনায় তুমি যাত্রা করেছিলে ওই দূর দূর দেশটাতে। আশ্চর্য, তারপর তুমি ঐ দেশটার হয়ে গেলে? ঐ মাটির হয়ে গেলে?
কত অদ্ভুত কথা মানুষের। তুমি নাকি ওদের দেশের মাটি দিয়ে গড়া মানুষ। তাই ঐ মাটি তোমায় নিয়ে গেছে। এই অদ্ভুত কথাগুলো এখন বিশ্বাস করতে হয়। বিশ্বাস করতে হয় তুমি মরে গেছো। চঞ্চলা তোমার শরীরটাও নাকি ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়েছে। যত্নের আতিশয্যে তোমার শরীরটাও নাকি শুইয়ে দেয়া হয়েছে পবিত্র কাবা ঘরের খুব কাছের মাটিতে। অদ্ভুত মা, ভারী অদ্ভুত। সারাজীবন নিয়মের মাঝে থেকে এ কেমন অজানা অনিয়মে আমাকে বন্দী করে গেলে বলতো?