অনেক কান্ডকীর্তির পর অবশেষে বাফুফেতে শেষ হতে চলেছে টানা চারবারের সভাপতি পদে দায়িত্বে থাকা কাজী সালাউদ্দীন অধ্যায়। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি পদে তিনি নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে কাজী সালাউদ্দিন নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। অবশ্য কিছুদিন আগেও নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছিলেন সালাউদ্দিন। তবে গতকাল জানিয়েছেন, পারিবারিক কারণে আসন্ন নির্বাচনে লড়বেন না তিনি। কিছুদিন আগে কাজী সালাউদ্দিন বলেছিলেন, ‘হারি বা জিতি, নির্বাচন করব’, সেই অবস্থান থেকে হঠাৎই সরে এলেন তিনি। জানালেন, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আগামী অক্টোবরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না তিনি। কোনো চাপে এই সিদ্ধান্ত কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে কিছু বলতে রাজি হননি বাফুফের বর্তমান সভাপতি। গত ৫ অগাস্ট প্রবল গণ আন্দোলনে রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদলের পর পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে ক্রীড়াঙ্গনেও। বাফুফে সভাপতির পদ থেকে সালাউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিও হতে থাকে জোরালো। তবে, অগাস্টের মাঝামাঝি তিনি বলেছিলেন, ‘হারি বা জিতি, নির্বাচন করব।’ মাঝের সময়েও সালাউদ্দিনের পদত্যাগের দাবি তুলতে থাকে সাবেক ফুটবলারদের অনেকে। গতকাল শনিবার তিনি হঠাৎ করে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে বার্তা দেন। সেখানেই বলেন, আগামী ২৬ অক্টোবরের নির্বাচনে লড়বেন না তিনি। বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আমাদের বাফুফের নির্বাচন আগামী ২৬ অক্টোবর।
এই নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে কিছু মানুষের চাওয়া ছিল, নির্বাচনটা যেন কিছুটা পেছায়, তো সেই অনুরোধ অনুযায়ী আমরা ফিফাকে চিঠি দিয়েছিলাম, ফিফা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে যে, নির্বাচন কোনোভাবে একদিনও পেছানো যাবে না। আমি আপনাদের সাথে বসেছি, আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে, আমি চার মেয়াদে আপনাদের সাথে ছিলাম। এই সুযোগ যে আমার জীবনে এসেছে, এজন্য আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ২৬ অক্টোবের যে নির্বাচন আসছে, সেখানে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না। এটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এটা আপনাদের জানানোর জন্য এসেছি।’ সালাউদ্দিনের সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। বারবার গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়ার হতাশা পেরিয়ে গত আসরে সেমি–ফাইনাল খেলেছিল দল। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ মঞ্চে দলের ব্যর্থতায় তাকেও সমালোচিত হতে হয়েছে সারাক্ষণ। কিছুদিন আগে অনূর্ধ্ব–২০ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্য শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। এই তৃপ্তি নিয়ে বিদায়ের কথাও বললেন সালাউদ্দিন। মাঝের সময়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে নানা ইস্যুতে বাহাসের ঘটনাও মনে রাখতে চান না সাবেক এই তারকা ফুটবলার। ‘আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ এই ১৬ বছর আমার সাথে কাজ করার জন্য। এই সময়ে অনেক বিষয়ে আন্ডারস্ট্যান্ডিং, মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে, এটা হতেই পারে, আমি মন থেকে সেটা ভুলে যেতে চাই, আশা করি, আপনারাও মনে কিছু রাখবেন না। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ, আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য। আশা রাখি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের যেন আরও উন্নতি হয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এবং ফুটবল যেন ভবিষ্যতে ভালোভাবে থাকে। অন্তত আমার একটা খুশি আছে যে, সবশেষ অনূর্ধ্ব–২০ দলকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হতে দেখতে পেরেছি আমি। ব্যক্তিগতভাবে এটা আমার জন্য ভালো অনুভূতির। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।’ কোনো চাপে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন বলেন, কোনো সংশয় রাখতে চান না বলেই আগে–ভাগে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন তিনি। ‘আমি আগেই এই ঘোষণা দিয়ে দিলাম যেন, কারো কোনো বিষয়ে কনফিউশন না থাকে। কারো কোনো সংশয় যেন না থাকে। আমি যা বলার, বলে দিয়েছি। আমি আপনাদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিব না। আমি আমার মতামতটা দিয়ে দিয়েছি যে, আমি কোনো নির্বাচন করব না। ধন্যবাদ।’
২০০৮ সালে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে কোনো নির্বাচনেই হারেননি সালাউদ্দিন। সামপ্রতিক সময়ে শারীরিক অসুস্থায় খুব একটা ফেডারেশনের না এলেও দায়িত্ব চালিয়ে গেছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই কিংবদন্তি খেলোয়াড়। এবার সরে দাঁড়ানোয় পরবর্তীতে আর নির্বাচন করতে পারবেন না সালাউদ্দিন। কারণ বাফুফের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৭২ বছরের পর কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না। সালাউদ্দিনের বর্তমান বয়স ৭১ বছর। আগামী ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বাফুফে নির্বাচন। তবে নির্বাচন পেছানোর জন্য ফিফার কাছে আবেদন করেছিল বাফুফে। কিন্তু আবেদন নাকচ করে দিয়েছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। নির্ধারিত সময়েই হবে নির্বাচন। এক বার্তায় গতকাল বাফুফেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।