চীনে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আভাস দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপলে’ গতকাল বুধবার বিকালে বাংলাদেশ সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, ‘চীন বাংলাদেশকে চারটি উপায়ে– অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, রেয়াতি ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ দিয়ে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তার জন্য কীভাবে চার ধরনের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে দুই দেশের কারিগরি কমিটি একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবে। এজন্য চীন থেকে একটি কারিগরি কমিটি শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে।’ খবর বিডিনিউজ ও বাসসের।
বাসস জানিয়েছে, দুই নেতার বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো পরে সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এ বৈঠক হয়েছে বলে জানান তিনি। জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা।
জিনপিং বলেন, ‘আমরা মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করব।’ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সরকারের প্রতি ধন্যবাদও জানান তিনি। চীনের বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৮০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে সেখানে চীনের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং আইটি ভিলেজগুলোতে চীনের বিনিয়োগ আহ্বান করেন। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তারা বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি করবেন।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রয়েছে জানিয়ে এ অঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সহায়তা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জবাবে শি জিনপিং বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে ক্রমাগত আরও বিনিয়োগ করতে চাই।’
শেখ হাসিনা জানান, উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি অনুপ্রেরণা। পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের মত কিছু আইকনিক অবকাঠামো নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য চীনের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান তিনি। বৈঠকে উভয় নেতা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘অন্য মাত্রায়’ নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
শি জিনপিং বলেন, ‘আমরা, দুটি দেশ, আগামী বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করতে যাচ্ছি। এই উদযাপন উপলক্ষে আমরা বিদ্যমান কৌশলগত সম্পর্ককে দ্বিতীয় ধাপে নিয়ে যেতে চাই।’ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমানোর ওপর জোর দেন বাংলাদেশ সরকারপ্রধান। জবাবে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি করব। চীন বাংলাদেশ থেকে আম আমদানি করবে। বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় চীন ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করবে।’
কৃষি খাতের উন্নয়নেও চীনের সহায়তা কামনা করেন শেখ হাসিনা। জবাবে চীনা প্রেসিডেন্ট জানান, একটি দেশের জন্য কৃষিতে স্বাবলম্বী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারিগরি সহায়তা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশকে এ খাতে সাহায্য করার আশ্বাস দেন তিনি।