এগার দিন অতিক্রান্ত হলেও পুত্রের হাতে খণ্ডবিখণ্ড হওয়া হতভাগ্য মো. হাসানের মুণ্ডুটি এখনো পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর পিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তারকৃত হাসানের বড় সন্তান মোস্তাফিজুর জানিয়েছিলেন, কাটা মুণ্ডুটি ফেলার দায়িত্ব ছিল সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী আনারকলির। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রো ইন্সপেক্টর মো. ইলিয়াস খাঁন জানিয়েছিলেন ছোট ছেলে ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতে পারলে মাথার খোঁজ মিলবে। কিন্তু গতকাল রোববার তিনি আজাদীকে জানান, জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আনারকলিকে গ্রেপ্তার করার পর সে জানিয়েছে মুণ্ডুটি কোথায় ফেলেছে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঘটনাস্থলে। দিনভর খুঁজেও লাভ হয়নি। তিনি বলেন, আমরা আনারকলির তথ্য অনুযায়ী তাকে নিয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে পাথরের ভেতর অনেক খুঁজেছি। মাথাটা যে এখানে ফেলেছে, তা সঠিক বলে মনে হচ্ছে। কারণ আমরা পচা গন্ধ পাচ্ছি। কিন্তু কোন পাথরের নিচে আছে তা খুঁজে পাইনি। আগামীকাল (সোমবার) আবার সকাল থেকে আমরা অভিযান চালাবো।
ইতোপূর্বে স্বীকারোক্তি দিতে গিয়ে মো. হাসানের বড় ভাই মোস্তাফিজুর বলেন, ২০ সেপ্টেম্বর পারিবারিক ও সাংসারিক নানান বিষয় নিয়ে বাবা, ছোট ভাইসহ আমরা তিনজন চট্টগ্রাম শহরে ছোট ভাইয়ের বাসায় আলোচনা করতে থাকি। একপর্যায়ে বাবার সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়। তখন আমার বাবা আমার গালে থাপ্পড় মারে। এতে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। সহ্য করতে না পেরে দুই হাত দিয়ে বাবার গলা চেপে ধরি। এতে বাবা মারা যায়। প্রথমে বস্তায় বাবার লাশ ঢুকিয়ে রুমের এক কোণায় রেখে রুমটি তালা মেরে বাইরে চলে আসি। এরপর ছোট বোনের জামাই ফোরকানকে কল দিয়ে একটি সিএনজি আনার কথা বলি। ওই সিএনজিতে করে মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। এরপর বাবাকে খণ্ডবিখণ্ড করি।
এদিকে মো. হাসানের শরীরের নয়টি খণ্ড পাওয়া গেলেও মুণ্ডুর খোঁজে পিবিআই টিম লেগে ছিল। গত শুক্রবার গভীর রাতে মহেশখালী বাবার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হাসানের ছোট ছেলে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আনারকলিকে। গ্রেপ্তারের পর সে পিবিআই টিমকে জানায়, ঘটনার পর পিবিআই যখন হাসানকে শনাক্ত করতে তার স্বজনদের খোঁজ করতে থাকে, তখন জাহাঙ্গীর ও আনারকলি পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ২২ সেপ্টেম্বর তারা দুই জন মুণ্ডুটি সমুদ্র সৈকতে পাথরের নিচে ফেলে দেয়। এরপর তারা প্রথমে নোয়াখালী চলে যায়। সেখান থেকে যায় ভোলা। একপর্যায়ে দুজন আলাদা হয়ে যায়। আনারকলি চলে আসে চট্টগ্রামে। বড়উঠান তার এক ফুপুর বাড়িতে যায়। সেদিন রাতে ফুপুকে ঘটনা খুলে বললে ফুপু ভয় পেয়ে যায়। পরদিন তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। ফোন ফ্যাক্সের একটি দোকান থেকে আনারকলি ফোন দেয় তার মাকে। তার মা বলে তুই আমার কাছে চলে আয়। আনারকলি চলে যায় তার বাবারবাড়ি মহেশখালীতে। সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।