নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা ওয়াসার দায়িত্ব

| শনিবার , ৪ মে, ২০২৪ at ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরজুড়ে চলছে পানির জন্য তীব্র হাহাকার। প্রতিদিন আজাদী পত্রিকা অফিসে ফোন আসে নানা অভিযোগ নিয়ে। সুপেয় পানির অভাবের কথা বলেন, বলেন পানির দুর্ভোগের কথা। নগরবাসী জানান, পানির জন্য প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছেন তাঁরা। এ নিয়ে দৈনিক আজাদীতে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে ১ মে অনলাইন সংস্করণে। তাতে তুলে ধরা হয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যর্থতা। বলা হয়েছে, গরমের তীব্রতায় চৌচির হচ্ছে স্থলভূমি। শুকিয়ে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর, তারই সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রামজুড়ে বাড়ছে সুপেয় পানির হাহাকার। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী।

গরমে পানির চাহিদা বাড়লেও তার জোগান দিতে পারছে না সেবাদানকারী সংস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসা। খেতে হচ্ছে লবণপানি। কারণ কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ছাড়া হচ্ছে তেমন পানি। যা কর্ণফুলী ও হালদা নদী দিয়ে সাগরের পানি উজানের দিকে যেতে না পারায় লবণাক্ততা থেকে রক্ষা পায় এবং এ পানি পরিশোধন করে নগরবাসীর মধ্যে সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। নেই তেমন বৃষ্টিপাতও। এতে সাগরের পানি উজানে উঠে আসায় লবণাক্ত হয়ে পড়েছে নদীর পানি। যার ফলে ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে সে পানিতে লবণাক্ততা থেকেই যাচ্ছে। এছাড়া নদীর পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শ্যাওলা জন্মেছে। সুপেয় পানির তীব্র সংকট নগরীর পতেঙ্গা, ইপিজেড, হালিশহর ও পাহাড়তলিসহ বিভিন্ন এলাকার অবস্থা প্রকট আকার ধারণ করায় পানির জন্য কষ্ট পোহাতে হচ্ছে লাখো মানুষ।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ওয়াসার সক্ষমতা প্রায় ৫০ কোটি লিটার। কিন্তু বর্তমানে ৪০ কোটি লিটারের বেশি পানি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে নগরের অনেক এলাকায় লেগে আছে পানির সংকট। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সেসব এলাকার মানুষ। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন এলাকায় রেশনিং করা হচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় পর্যাপ্ত পানি ছাড়া হচ্ছে না। ফলে সাগরের পানি উঠে আসছে উজানে। তবে বৃষ্টিপাত হলে এবং হ্রদে পানি বাড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার বিশেষ কাজ হলো নিরাপদ ও পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা, শিল্প এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের মাধ্যমে স্যানিটেশন এবং ভাল স্বাস্থ্যকর অবস্থা নিশ্চিত করতে গার্হস্থ্য এবং অন্যান্য পয়ঃনিষ্কাশনের যথাযথ নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা এবং চট্টগ্রাম শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। দ্রুত বর্ধনশীল শহরের সেবায় ওয়াসা পানি সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশন প্রদানের সময় ওয়াসাকে অসংখ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। যেমনভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নেমে যাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে খাল ও নদীনালার অভাব, শহরের ঘনবসতি ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাওয়া, ভূউপরিস্থ পানি কলকারখানার বর্জ্য নিষ্কাশনের মাধ্যমে ব্যবহার অনুপযোগী হওয়া, নগরবাসী কর্তৃক অবৈধ পানি ব্যবহার প্রবণতা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কাজ করতে হয় ওয়াসাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পরিসংখ্যান নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। খালবিলনদী দখল ও দূষণ, রাসায়নিক ও কীটনাশকের অবাধ ব্যবহার, উপকূলের লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে দেশে নিরাপদ পানির উৎস সংকুচিত হয়েছে। সারফেস ওয়াটারের বদলে মাটির নিচের পানির ওপর বিপজ্জনক নির্ভরতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে নিরাপদ পানির সংকটকে কাজে লাগিয়ে পানির বাণিজ্যিকীকরণ। ফলে চড়া মূল্যে বোতল কিংবা জারের পানি কিনে খাওয়া এখন স্বাভাবিক বাস্তবতা। এ পরিস্থিতির পরিবর্তনে পানিকে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে দেখা বন্ধ করতে হবে। দেশের সব মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহের দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকেই।

নগরীতে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা একটি জটিল কিন্তু অপরিহার্য কাজ, যার জন্য সকল অংশীদারের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। একটি স্বাস্থ্যকর শহরে প্রতিটি বাসিন্দার জন্য পরিষ্কার এবং নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা ওয়াসার দায়িত্ব। নগরজুড়ে পানির যে হাহাকার শুরু হয়েছে, তা অচিরেই বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে