নারী সংস্কার কমিশন বাতিল চায় হেফাজত, প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান জামায়াতের

৩ মে ঢাকায় হেফাজতের মহাসমাবেশ

| সোমবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৫ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

দেশের ইসলামপন্থীদের অন্যতম প্ল্যাটফরম ‘হেফাজতে ইসলামে’র নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি তোলার পর জামায়াতে ইসলামও কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নারী সংস্কার কমিশন গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার পর ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। খবর বিডিনিউজের।

ইসলামি উত্তরাধিকার আইন ও ইসলামি পারিবারিক আইন নিয়ে যে পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ কমিশন দিয়েছে, হেফাজতের আপত্তি মূলত সেই জায়গায়। এই কমিশন বাতিলসহ কয়েকটি দাবিতে সরকারকে ৩ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। এই সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ না হলে ৩ মের মহাসমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলছে তারা।

জামায়াতে ইসলামী কোন সুপারিশ নিয়ে তাদের আপত্তি তা স্পষ্ট করে না বললেও কিছু সুপারিশকে ‘গর্হিত’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এসব বিষয় সমাজকে ‘চরম অস্থিতিশীলতার’ দিকে ঠেলে দেবে।

গতকাল রোববার রাতে জামায়াতে ইসলামের ফেইসবুক পেইজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, দলটির আমীর শফিকুর রহমান ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গতকাল (শনিবার) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। তাদের সুপারিশকৃত রিপোর্ট দেখে বিস্মিত! দেশে যখন নৈতিকতার অভাবে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং পারিবারিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামাজিক শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে ওই সুপারিশমালায় এমন কিছু গর্হিত বিষয় নিয়ে আসা হয়েছে তা সমাজকে অনিশ্চয়তা ও চরম অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবে। কতিপয় সুপারিশ কোরআন এবং হাদিসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি সকল ধর্মের মূল্যবোধকে তছনছ করে দেবে। বাংলাদেশের জনগণ এক বাক্যে তা প্রত্যাখ্যান করবে।’

বেসরকারি সংস্থা ‘নারীপক্ষ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হককে প্রধান করে গত ১৮ নভেম্বর নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।

কমিটি শনিবার সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে ৪৩৩টি সুপারিশ করা হয়েছে।

জামায়াতে ইসলাম এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যানের কথা বললেও হেফাজতে ইসলাম এই কমিশনটিকেই বাতিলের দাবি জানিয়েছে। রোববার রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠক শেষে এসব দাবি ও কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হয়।

ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আমীর শাহ মহীবুল্লাহ বাবুনগরী। সেখানে সংগঠনের মহাসচিব সাজিদুর রহমানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা কথা বলেন।

পরে সেখানে দাবিগুলো তুলে ধরে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রথম দাবি, ফ্যাসিবাদী আমলে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নামে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে এবং ২০২১ সালের মোদিবিরোধী আন্দোলনে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের হত্যাকাণ্ডসহ সকল হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার কমিশনে যে প্রস্তাব আনা হয়েছে, তার মধ্যে অত্যন্ত বিতর্কিত এবং শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে একটা প্রস্তাব, তা হল ‘বহুত্ববাদ’। আমরা বহুত্ববাদের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করছি। বহুত্ববাদের প্রস্তাব বাতিল করে মহান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের ধারা পুনর্বহাল করতে হবে।

সরকারকে ৩ মে পর্যন্ত সময় বেধে দিয়ে মামুনুল বলেন, ৩ তারিখের আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ঘোষণা প্রত্যাহার এবং নারী অধিকার সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাকে প্রত্যাহার এবং ইসলামকে কটাক্ষ করে প্রস্তাবনা দেওয়ার দায়ে এই কমিশনকে বাতিল করা না হলে৩ মের মহাসমাবেশ থেকে হেফাজতে ইসলাম পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআইএফআইসি আমার বন্ডের অর্থ আত্মসাৎ : সালমান শায়ান শিবলীর বিরুদ্ধে মামলা
পরবর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় সার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে ৩ মহিষের মৃত্যুর অভিযোগ