অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টমসে চলছে শুদ্ধি অভিযান। প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রাপ্ত না হয়েও বছরের পর বছর ধরে কাজ করা প্রায় শতাধিক ফালতু বা দালালকে বের করে দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া সম্প্রতি কাস্টমসের উপ–কমিশনার নুর নাহার লিলির কক্ষের তালা ভেঙে নথি চুরির চেষ্টার ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে কাস্টমস কর্র্তৃপক্ষ। এ ঘটনার জেরে পুরো কাস্টমসে নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কাস্টমসে ভেতরে প্রবেশে কড়াকড়িসহ বাড়ানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন। চট্টগ্রাম কাস্টমসের প্রিভেন্টিভ শাখার কর্মকর্তারা জানান, এখানে কোনো কাজ ছাড়া অযথা ঘুরাঘুরি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সেই জায়গায় একজন উপ–কমিশনারের কক্ষের তালা ভেঙে নথি চুরির চেষ্টা দুঃসাহসই বলতে হয়। কারণ নথি ছাড়াও কাস্টমসের সিস্টেম সফটওয়্যারে হাজার হাজার গুরুত্বপূর্ণ চালানের ডাটা রেকর্ড রয়েছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে কাস্টমসে গিয়ে দেখা গেছে, মূল প্রবেশপথে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা আইডি কার্ড এবং নির্দিষ্ট কাজ ছাড়া হাউসে প্রবেশ করতে লোকজনকে নিষেধ করছেন। এছাড়া তারা অনেকের আইডি কার্ডও চেক করছিলেন।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রহমতপুর গ্রামের আলী আহমেদের ছেলে মো. মেহেদী হাসান রায়হান এবং ফেনী সদরের কেএম হাট জামাল মেম্বারেরর বাড়ির নৈরাজপুর গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে খায়েজ আহমদ পরস্পর যোগসাজসে মোটরসাইকেলযোগে কাস্টমস হাউসে প্রবেশ করেন। কাস্টমসের দায়িত্বরত আনসার সদস্য দ্বীন ইসলাম তাদের দেখতে পেয়ে ভেতরে গিয়ে দেখেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ–কমিশনার নুর নাহার লিলির কক্ষের দরজা খোলা। দরজার ভেতরে তখন এক ব্যক্তিকে তিনি অন্ধকারে বিভিন্ন নথিপত্র খুঁজতে দেখেন। এছাড়া আরেক ব্যক্তি কাস্টমসে ভেতরে হাঁটাহাটি করছিলেন। এ সময় তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এর আগে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫টি মোবাইল ফোন, ২টি চাবির রিং, একটি তালা, একটি ল্যাপটপ, ইউএসবি ক্যাবলের সাথে চিপস, ১টি রাউটার এবং মাস্টার চাবি জব্দ করেন আনসার সদস্যরা। এ ঘটনায় ওইদিনই চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। অপরদিকে ওইদিন সন্ধ্যায় কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মহসিন বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
অপরদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমসে ফালতু বা দালালদের সহায়তায় ঘুষ লেনদেনে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলেও কখনো বের করে দিতে পারেননি। এবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা অভিযানে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সত্যতা পাওয়া যায়। ফলে কাস্টমস থেকে ফালতুদের বের করে দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে উপ–কমিশনারের কক্ষে তালা ভেঙে প্রবেশে দুইজনের প্রবেশের ঘটনায় আমরা হাউসের নিরাপত্তা ও নজরদারি জোরদার করেছি। কাজ ছাড়া কেউ যাতে কাস্টম হাউসে প্রবেশ না করে সেজন্য দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছি। একইসাথে কাস্টমসের লোক না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সেকশনে কাজ করা ফালতুদের আমরা বের করে দিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ছিল। আমরা চেষ্টা করছি, চট্টগ্রাম কাস্টমসের সকল কাজে স্বচ্ছতা আনতে। এই কাজ করার ফলে অনেকের স্বার্থে আঘাত হানবে জানি। কিছুদিন আগে আমরা চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছি। সামনে আরো কিছু নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে এতদিন যেসব ফালতু কাজ করতো, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান একই রকম থাকবে।