নগরে ফুটপাতে হকার বসবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ১১টা

পুনর্বাসনে রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন জায়গা এবং জহুর হকার্স মার্কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ হবে । ব্যাটারি রিকশা নিয়ে কঠোর অবস্থানে মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

নগরে ফুটপাতে হকার বসার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। নির্ধারণ করা সময় অনুযায়ী, সকালে হকার বসতে পারবে না। বিকাল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বসতে হবে তাদের। বিষয়টিকে পর্যায়ক্রমে ইভনিং মার্কেটে রূপ দেওয়া হবে। পাশাপাশি হকার পুনর্বাসনের জন্য রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন জায়গা এবং জহুর হকার্স মার্কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। এসব তথ্য জানান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল রোববার সকালে নিউ মার্কেট এলাকায় ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, নালা ও নর্দমা পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন কার্যক্রম এবং হকারদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার স্থান পরিদর্শনে যান মেয়র। পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের হকারদের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার কথা জানান তিনি। যানজট নিরসনের লক্ষ্যে হকারদের পুনর্বাসন ও হকার উচ্ছেদের ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ না করে বুঝিয়ে কাজ আদায়ের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। এ সময় ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার পাশাপাশি খালনালায় পড়ে প্রাণহানি এড়াতে চসিকের উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন তিনি।

শাহাদাত বলেন, হকাররা সকালবেলা ফুটপাতে বসতে পরবে না। বিকাল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বসতে পারবে। ধাপে ধাপে এটা আরও গোছানো হবে। ভবিষ্যতে এটাকে ইভনিং মার্কেট হিসেবে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা বিকাল ৫টা থেকে চেয়েছিলাম। তারা অনুরোধ করায় ৩টা করা হয়েছে।

হকার পুনর্বাসনে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, হকার পুনর্বাসনের জন্য দুটি নির্দিষ্ট জায়গা আমরা বিবেচনায় রেখেছি। প্রথমটি হলো জহুর হকার্স মার্কেটের জায়গায় একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকা। যেখানে বর্তমানে কিছু অপরাধী চক্র, মাদক ব্যবসায়ী ও আসক্তদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। সেটা মুক্ত করে আমরা চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। সেখানে হকারদের বসানো যেতে পারে, যেখানে অবশ্যই রেলওয়ে রাজস্ব পাবে।

তিনি বলেন, জহুর হকার্স মার্কেট ২০০ গণ্ডা জায়গায়। ওখানকার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছি। তাদেরকে বিভিন্নভাবে অনুরোধ করছি। সেখানে আমরা ২০ তলা ভবন করে দিতে পারি, সেটা অসম্ভব নয়। বর্তমানে ৮০০ দোকানদার আছে। তাদের বলেছি, প্রতিজনকে দুটি করে ১৬শ দোকান দেওয়া হবে। কিন্তু ৫ হাজার হকারকে পুনর্বাসন করতে চাই।

তিনি বলেন, কোনো গায়ের জোর নয়, মারামারি নয়, কোনো গ্রেপ্তার নয়, কোনো আইনের প্রয়োগ না করেও মানুষকে বুঝিয়ে অনেক কিছু করা যায়। কোনো জোরজবরদস্তি নয়, হকারদের বোঝানোর মাধ্যমেই উচ্ছেদ কার্যক্রম সফল করা সম্ভব। কাউকে মারধর করে, বারবার চাপ দিয়ে কোনো কাজ স্থায়ী হয় না। সব পক্ষকে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি, নগরের যানজট নিরসনে হকার ব্যবস্থাপনা জরুরি। মেয়র বলেন, নগরবাসীর চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করতে ফুটপাত দখলমুক্ত করতেই হবে। পাশাপাশি হকারদের জীবনজীবিকার বিষয়টি মাথায় রেখেই ধাপে ধাপে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই মিলে শহরটাকে একটি দৃষ্টিনন্দন ও বাসযোগ্য শহরে পরিণত করতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে যানজটপূর্ণ এবং জনসমাগমে ব্যস্ত এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে টার্গেট করা হয়েছে নিউ মার্কেট, রেয়াজুদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেটসহ আশপাশের অঞ্চলগুলোকে। এখানে প্রতিনিয়ত বিপুল সংখ্যক মানুষ কেনাকাটা করতে আসে, যার ফলে যানজট লেগেই থাকে। এর আগেও আমরা চকবাজার এলাকায় রাস্তা দখল করে বাজার বসানো দোকানদারদের পুনর্বাসন করেছি এবং এলাকা দখলমুক্ত করেছি।

মেয়র বলেন, মেডিকেল কলেজ এলাকায় আমাদের লক্ষ্য আছে। এখানে রোগী এবং তাদের স্বজনরা ওষুধ ও চিকিৎসাসেবার জন্য ছুটোছুটি করেন, আর ফুটপাতগুলো দখল হয়ে থাকে। আমি এই এলাকার ব্যবসায়ী ও দখলদারদের অনুরোধ করব, আপনারা স্বেচ্ছায় সরে যান। কারণ আমরা এই এলাকাকেও শৃঙ্খলার আওতায় আনতে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যে আগ্রাবাদ এলাকায় একটি পেপার্কিং ও নাইট মার্কেট চালু করেছি। এতে যানজট অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ রকম পেমার্কেট ব্যবস্থাপনা চালু করা যেতে পারে।

আমাদের কোনো জায়গা নেই : ডা. শাহাদাত বলেন, রেলওয়ে মন্ত্রণালয়েরে উপদেষ্টাকে বলেছিলাম, শহরের প্রয়োজনে আমরা আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু চাইব। উনাকে বলেছি, মানুষের বিনোদনের জন্য আমার ঢেবার পাড়, জোড়া দিঘি দরকার। উনি রাজি হয়েছেন। সিআরবিতে আমরা রাস্তাঘাটের কাজ করতে পারছিলাম না, রেলওয়ে বলছে তারা করবে। উনি (উপদেষ্টা) বলেছেন, আপনি করে ফেলেন। আমি সম্মতি প্রকাশ করেছি।

মেয়র বলেন, সিআরবি আরো চমৎকার জায়গায় পরিণত হবে। সেখানে আমি গ্রিন গ্রাস করব; যাতে দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়। এখানেও (রেলস্টেশন সংলগ্ন জায়গা) রেলওয়েকে ছাড় দিতে হবে। পুরো শহর রেলওয়ে, ডিসি এবং বন্দরের জায়গা। আমাদের তো কোনো জায়গা নেই। আমরা মানুষের জন্য চাচ্ছি। এই হকারগুলো কোথায় যাবে? জায়গাটা যদি পেয়ে যাই, এক থেকে তিন হাজার হকার পুনর্বাসন করতে পারব। হকার্সদের আমব্রেলা শেড দিয়ে বসাতে পারলে দেখতেও দৃষ্টিনন্দন লাগবে।

তিনি বলেন, আমরা যদি আসকার দিঘির পার্কটিকে দৃষ্টিনন্দনভাবে পুনঃউন্নয়ন করতে পারি, যদি ভেলুয়ার দিঘি, ঢেবার পাড়সহ এসব ঐতিহ্যবাহী জায়গায় ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে মানুষের সামনে নতুনভাবে তুলে ধরতে পারি আর সিআরবি এলাকাটিকে যদি আরও সবুজ, আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলতে পারি তাহলে মানুষ সত্যিই এই শহরে স্বস্তি পাবে।

ব্যাটারি রিকশা নিয়ে কঠোর অবস্থান : মেয়র বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো শহরের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে। ওইদিন একটি শিশু খালে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছে, যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। ব্যাটারি রিকশাগুলো দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে, রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। আমি সিএমপিকে ধন্যবাদ জানাই, তারা একদিনেই এক হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আটক করেছে। এভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে।

তিনি বলেন, পুলিশ কমিশনারসহ সমন্ত সেবাপ্রদানকারী সংস্থাকে বলছি, এদেরকে অবশ্যই অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় শহরে দুর্ঘটনা বেড়ে যাবে। নগরবাসীকে বলব, আপনারা অনুগ্রহ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোতে চড়া থেকে বিরত থাকুন। আপনারা যদি তাদের নিরুৎসাহিত করেন তাহলেই তারা রাস্তায় নামা বন্ধ করবে।

মেয়র বলেন, এই শহরে আর কোনো মা যেন সন্তান হারিয়ে বুক খালি না করে। আমরা সবাই মিলে সেই দায়িত্ব নিতে হবে। আমি নিজেকে শুধু একজন মেয়র নই, একজন নগরসেবক, একজন সমাজসেবক হিসেবে ভাবি। আমরা সবাই মিলে এই শহরটাকে ক্লিন, গ্রিন এবং হেলদি সিটিতে রূপান্তরিত করব। সবাই মিলে যানজটমুক্ত রাখব।

অরক্ষিত নালা দেখলে জানাবেন : অরক্ষিত খালনালায় নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, নগরবাসীকে বলব, ৪১ ওয়ার্ডের কোথাও খোলা ডাস্টবিন, ম্যানহোল এবং স্ল্যাবহীন দেখলে আমাদের জানাবেন। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব। যেসব খাল ও নালার পাশে সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই, প্রিভেন্টিভ ওয়াল নেই দেখলে আমাদের জানাবেন। ইতোমধ্যে ওয়ার্ডভিত্তিক ১০ জনের একটি টিম গঠন করে দিয়েছি, তারাও রিপোর্ট দিচ্ছে।

তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ইতোমধ্যে অনেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বহদ্দারহাটে কর্পোরেশনের নিজের মার্কেট, যেটি নালার উপর ছিল, আমি নিজেই ভেঙে দিয়েছি। মাসে প্রায় ১২১৪ লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। তবুও জনগণের স্বার্থে আমরা সেটা করেছি। অতএব যারা নালার উপর অবৈধ স্থাপনা করেছেন, তাদের অনুরোধ করব আপনারা এগুলো ভেঙে দিন। আমরা চাই শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা কার্যকর হোক, মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাচ্ছেন মেয়র শাহাদাত
পরবর্তী নিবন্ধনসরুল হামিদ বিপুর ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্ট-গাড়ি জব্দ, ৭০ অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ