আমাদের সেশনে অন্য বিভাগে যারা পড়ে তাদের অনেকের মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ। কেউ ফলাফল পেয়েছে, কেউ পায়নি। আবার কেউ অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ক্লাস করছে কিংবা চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখনো অনার্সই শেষ হয়নি। একটি পরীক্ষার জন্য আটকে গেছি। অন্তত অনার্সের পরীক্ষাটা হয়ে গেলে নিশ্চিন্তে কিছু একটা করতে পারতাম। এখন কোনো দিক হলো না। কথাগুলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউটের ২০১৪-১৫ সেশনের মো. জিয়াউল হকের। একদিকে সেশনজট, অপরদিকে করোনার কারণে বিপাকে এ অনুষদের শিক্ষার্থীরা। তিনি বলেন, একটি পরীক্ষার কারণে অনার্সটা ঝুলে আছে। চাকরির বয়স চলে যাচ্ছে। স্যাররা চাইলে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পরীক্ষাটা নিতে পারেন। শুধু ১৪-১৫ সেশন নয়। ১৩-১৪ সেশনের যাদের এক বছর আগে মাস্টার্স শেষ করে চাকরিতে যোগদান করার কথা, তারা সবেমাত্র মাস্টার্সে উঠেছেন। ১৫-১৬ সেশন, যাদের অনার্স শেষ করার কথা, তারা মাত্র তৃতীয় বর্ষের ফলাফল পেয়েছেন। অনার্সে চারটির জায়গায় ছয়টি ব্যাচ চলমান রয়েছে। এর চেয়ে ভয়াবহ চিত্র একই অনুষদের ফিশারিজ বিভাগের। এ বিভাগের ১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের অনার্সের ফলাফল হয়নি এখনো। ১৪-১৫ সেশনের অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শুরু হয়নি। ১৫-১৬ সেশন মাত্র চতুর্থ বর্ষে উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিশারিজ বিভাগের ১৪-১৫ সেশনের এক শিক্ষার্থী আজাদীকে বলেন, নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে আমাদের শিক্ষাজীবন। অনিশ্চিত জীবন নিয়ে হাঁটছি। মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে চলছে বিভাগ। পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই। নেই ল্যাব ও হলরুম। তবু পরীক্ষাগুলো ঠিকমতো হলে এতটা জটে পড়তে হয় না আমাদের। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
একই চিত্র অনুষদের আরেক বিভাগ ওশানোগ্রাফিতে। ফিশারিজের মতো একই দশা ওশানোগ্রাফি বিভাগে। এরকম দীর্ঘমেয়াদী সেশনজটের শঙ্কা রয়েছে ১০ বিভাগের। এর মধ্যে চবি কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ইংরেজি ও নাট্যকলা বিভাগ এবং জীববিজ্ঞান অনুষদের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ অন্যতম।
এ ব্যাপারে মেরিন সায়েন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. রাশেদ উন নবী আজাদীকে বলেন, ক্লাস শেষ করে এরপর পরীক্ষা শুরু হবে। আমরা ক্লাসগুলো নিয়ে নিচ্ছি। আটকা পড়া পরীক্ষাগুলোর ব্যাপারে তিনি বলেন, ওগুলো কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। নানা জটিলতা আছে। বিশ্ববিদ্যালয় না খুললে তো আর পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।
জানা যায়, পরীক্ষা চলাকালীন ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেছে এরকম রয়েছে ২০ বিভাগের প্রায় ৩৫ বর্ষ। আবার করোনার আগেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু এখনো ফলাফল হয়নি প্রায় ৫০টিরও বেশি বর্ষের। এছাড়া করোনার ধাক্কায় প্রায় সব বিভাগেরই ছয় থেকে এক বছরের জটে পড়তে হবে।
করোনার কারণে গত আট মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে ৬ সেপ্টেম্বর থেকে। এতেও উপস্থিতি গড়ে অর্ধেক। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট এড়াতে আটকা পড়া পরীক্ষাগুলো নেওয়ার, করোনার আগে অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর ফল দ্রুত প্রকাশ কিংবা অটোপাসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলেও চবি কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। শুধু একটি পরীক্ষা আটকে থাকার কারণে কিছু কিছু শিক্ষার্থী কোথাও চাকরির আবেদন করতে পারছে না। আবার কেউ শুধু ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এরকম এক শিক্ষার্থী বলেন, অনার্সে একটি পরীক্ষা আর ব্যবহারিক রয়ে গেছে। ইতিমধ্যে মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হয়েছে। এখন মাস্টার্সের ক্লাস করব নাকি চাকরির প্রস্তুতি নেব বুঝতে পারছি না। আবার কোথাও আবেদনও করতে পারছি না। কারণ আমি তো এখনো এইচএসসি পাস।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) চৌধুরী আমীর মোহাম্মদ মুছা আজাদীকে বলেন, এটা আমাদের মাথায় আছে। কয়েকদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে একাডেমিক শাখাসহ উপাচার্য ম্যাডামের সাথে বৈঠক হওয়ার কথা আছে। এতে অনার্স, মাস্টার্স এবং যাদের ভাইভা বা দুই-একটি পরীক্ষা এবং ব্যবহারিক আটকে গেছে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আস্তে আস্তে বাকি ফলাফলগুলোও প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে অনেকবার চেষ্টা করেও একাডেমিক শাখার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান বলেন, পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন বিভাগ থেকে নির্দেশনা চাচ্ছে। এটা নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সাথে বৈঠক হবে। এতে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।