পতেঙ্গা সৈকতে এবার টিকেট কাটতে হবে ভ্রমণ পিপাসুদের। সৈকত পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপারেটর নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গড়ে তোলা ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতকে দুই জোনে ভাগ করে বেসরকারি অপারেটর দিয়ে পরিচালনা করা হবে। আগে পুরো সৈকত উন্মুক্ত থাকলেও এবার কিছু অংশ টিকেট কেটে এবং কিছু অংশ ফ্রিতে ব্যবহার করা যাবে। তবে নিয়োগ পাওয়া অপারেটরকে পুরো সৈকতই রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র পতেঙ্গা সাগরপাড়ে বিশ্বমানের একটি সৈকত গড়ে তোলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় সাগরপাড়কে নান্দনিকতার সাথে তৈরি করা হয়। সৈকতকে সামনে রেখে বসার ব্যবস্থাসহ রাতের বেলায় আলোর ব্যবস্থা করা হয়। ওয়াকওয়ে থেকে শুরু করে ট্যুরিজমের নানা সুবিধা চালু করার সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিপুল অর্থ ব্যয়ে গড়ে তোলা সৈকত প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। বিদ্যুৎ বিলের যোগান না থাকায় সৈকতের লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বাজেট না থাকায় ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়িতে সৈকত ক্রমেই নান্দনিকতা হারিয়ে ফেলছিল। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সিডিএ সৈকত পরিচালনার জন্য অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিষয়টি বোর্ড সভায় নেয়ার পর চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। নগর পরিকল্পনাবিদ ও সিডিএর বোর্ড সদস্য স্থপতি আশিক ইমরানকে আহ্বায়ক এবং সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসকে সদস্য সচিব করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পতেঙ্গা সৈকতের উপর ইতোমধ্যে একটি রিপোর্ট উপস্থাপন করেছে।
সিডিএর পক্ষ থেকে পতেঙ্গা সৈকতকে দুটি জোনে বিভক্ত করে অপারেটর নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেলে অপারেটর নিয়োগের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। মন্ত্রণালয় থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার ব্যাপারে সিডিএ যথেষ্ট আশাবাদী বলেও সূত্র জানিয়েছে।
দুটি জোনের অপারেটরই সিডিএর ছয় কিলোমিটারের সৈকত এবং আউটার রিং রোডের গার্ডেনিং, লাইটিং, গাছ লাগানোসহ রক্ষণাবেক্ষণ কাজ পরিচালনা করবে। সৈকতের বিভিন্ন অংশে নিজেদের মতো করে ট্যুরিস্ট স্পট গড়ে তোলার সুযোগ পাবে অপারেটর। এছাড়া তারা নিজেদের মতো করে ট্যুরিস্টদের কাছ থেকে টিকেট বিক্রির মাধ্যমে সুবিধা দেবে। তবে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্তও রাখতে হবে। টিকেট কেটে বাড়তি সুবিধা যেমন পাওয়া যাবে তেমনি টিকেট কাটা ছাড়াও একজন ট্যুরিস্ট যাতে প্রাকৃতিক সৈকত উপভোগ করতে পারেন তার ব্যবস্থা রাখা হবে। তবে সৈকতের দুটো অংশের আলো এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে করতে হবে। অপারেটরের আয়ের একটি অংশ সিডিএকে পরিশোধ করতে হবে। এটি বার্ষিক এককালীন হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বের নানা দেশে এই ধরনের সৈকত রয়েছে। যেখানে অপারেটর সৈকতে সুযোগ সুবিধা দিয়ে নিজেদের মতো করে পরিচালনা করে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গাকেও বিশ্বমানের সৈকতের আদলে গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগটি নেয়া হয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল সিডিএ চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পতেঙ্গা বিচকে বিশ্বমানের বিচে হিসেব দেখতে চাই আমরা। তাই এই ব্যাপারে কিছু উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সিডিএ বোর্ডই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে কোনো ভাবেই সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না। মানুষ যাতে নিজের মতো করে সাগরপাড় উপভোগ করতে পারেন, হাঁটতে পারেন তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। বিচ এলাকার আলো এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটি নিশ্চিত করতেই অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।