রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ফুলের ঝাড়ু সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয় রাঙ্গুনিয়ায়। তারপর এসব ঝাড়ু শুকিয়ে উপযোগী হলে তা মাঠ থেকেই কিনে নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এমনকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে ফুলঝাড়ু রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও। রাঙ্গুনিয়া থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ফুলের ঝাড়ু দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ হয়। রাঙামাটি ও বান্দরবানের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় রাঙ্গুনিয়ায় ফুলঝাড়ুর বড় বাজার গড়ে উঠেছে। এই সহজ ব্যবসায় অনেক শিক্ষিত বেকার যুক্ত হয়ে ঘুচেছেন নিজেদের বেকারত্ব, দেখছেন সমৃদ্ধির আশার আলো। প্রতিবছর রাঙ্গুনিয়ার শতাধিক মৌসুমী ব্যবসায়ী এই ব্যবসায় কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পাচ্ছেন সাফল্য।জানা যায়, বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস বিভিন্ন পাহাড় থেকে প্রাকৃতিকভাবে জেগে ওঠা ঝাড়ুফুল সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়। ৪ থেকে ৫ ফুট লম্বা সাইজের কেটে ১০ থেকে ১২টি ফুল একত্রিত করে একমুঠো করে তা বেঁধে একেকটি ঝাড়ু তৈরি করা হয়। এটি বাড়িঘরের ঝাড়ু দেয়ার কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি পাকাঘর নির্মাণে রাজমিস্ত্রিদের কাজেও ব্যবহার হচ্ছে। পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পাহাড়ে বর্ষার পানিতে নলখাগড়া গজিয়ে ওঠে। কোনো রকম পরিচর্যা ছাড়াই এ নলখাগড়া প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। শীতের শেষ সময়ে ফুল হয়ে ফোটে নলখাগড়া। আর তখনই পাহাড়ি আদিবাসীরা নলখাগড়ার ফুল কেটে স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। সেখান থেকেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তা কিনে নিয়ে আসেন রাঙ্গুনিয়ায়। তারপর তা শুকিয়ে গুদামজাত করে রাখা হয়। সেখান থেকেই মূলত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বড় পাইকাররা এসব ফুলঝাড়ু বিক্রির জন্য নিয়ে যান।
সরেজমিনে পৌরসভার ইছাখালী জাকিরাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ধারে পাহাড়ে গায়ে সারি সারি ভাবে বিছিয়ে শুকানো হচ্ছে পাহাড়ের নলখাগড়ার ফুল। কেউ কাঁচা ফুলের আঁটি বিছিয়ে দিচ্ছেন, কেউবা আবার শুকনো ফুল আঁটি বেঁধে সংরক্ষণ করছেন। ট্রাক আসলে আঁটি ভাঁজ করে ট্রাকে তুলছেন শ্রমিকরা। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় ফুলের ঝাড়ুর কদর বৃদ্ধির পাশাপাশি দামও বেড়েছে। একদিকে ভালো দাম অন্যদিকে ব্যাপক চাহিদার কারণে দিন দিন এই ব্যবসায় আগ্রহ বাড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন বাজার
থেকে রাঙ্গুনিয়া আনা পর্যন্ত ছোট আঁটি ৩০–৪০ টাকা এবং বড় আঁটি ৬০–৭০ টাকা খরচ পড়ে। তারপর প্রায় দশ দিন আঁটিগুলো শুকাতে হয়। এ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের বেতন প্রতিদিন তিনশ টাকা। এরপর প্রতি ২০টি আঁটি দিয়ে এক একটি বান্ডেল করা হয়। এরপর প্রতি বান্ডেল বাজার অনুসারে সর্বনিম্ন ১৫০০–২৫০০ টাকা পর্যন্ত পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়। তবে ঢাকার বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় সেখানের খুচরা ব্যবসায়ীরা এক আঁটি ঝাড়ু ১৫০–২০০ টাকায় বিক্রি করেন বলে জানা যায়।
ইছাখালী জাকিরাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী মোহরম আলী জানান, তিনি প্রায় ৭ বছর ধরে এই ব্যবসায় করে আসছেন। রাঙামাটি জেলার ফারুয়া, বিলাইছড়ি, শুভলং, লংগদু, বরকল, কাপ্তাই, বাঙালখালী, রাজস্থলীসহ বিভিন্ন বাজার থেকে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করেন তিনি। তারপর এসব ফুলঝাড়ু শুকিয়ে গুদামজাত করলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এসে ট্রাকভর্তি করে তা কিনে নিয়ে যায়। তিনি গত বছর প্রায় ৩০ লাখ টাকার ব্যবসায় করেছেন। এ বছর তিনি ৬০–৭০ লাখ টাকার ফুলঝাড়ু কিনার লক্ষ্যমাত্র ঠিক করেছেন বলে জানান। মোহাম্মদ রুবেল নামে এক মৌসুমি ব্যবসায়ী জানান, তিনি এখন পর্যন্ত ১০০০ আঁটি ফুলঝাড়ু কিনে এনে এখন শুকানোর কাজ করছেন। প্রতি আঁটি ৬০–৬৫ টাকা মত খরচ পড়েছে তার। মোহাম্মদ ইলিয়াছ নামে অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, রাঙ্গুনিয়ার শিলক, কোদালা, মরিয়মনগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক ব্যবসায়ী আছেন যারা প্রতিবছর কোটি টাকার উপর বিনিয়োগ করেন ফুলঝাড়ু ব্যবসায়। তবে পার্বত্যাঞ্চল থেকে এসব ফুলঝাড়ু আনার পথে বিভিন্ন স্টেশনে চাঁদা দিতে হয় বলে তার অভিযোগ। এতে তাদের খরচ বেশি পড়ে। বিষয়গুলোর প্রতি যদি সংশ্লিষ্টরা দৃষ্টি দেন, তবে এই খাতে সরকার যেমন রাজস্ব পাবে তেমনি সহজ এই ব্যবসায় বেকারত্ব গুছবে অনেক বেকার যুবকের।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার জানান, ফুলঝাড়ু এখন প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। দেশ–বিদেশে ফুলের ঝাড়ুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই খাতে ব্যবসায়ীদের ঋণসহ নানা সুযোগ–সুবিধা দিলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে সরকার। পাশাপাশি বেকারত্বও অনেকাংশে গুছবে।