জেলা ও উপজেলায় মামলা-জরিমানা

লকডাউনে দোকান খোলা ও অযথা ঘোরাঘুরি

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৫ জুলাই, ২০২১ at ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ

কঠোর লকডাউনের চুতর্থ দিনে গতকাল রোববার মাঠপর্যায়ে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করায় কঠোর অবস্থানে ছিল উপজেলা প্রশাসন। উপজেলাগুলোতে নির্বাহী কর্মকর্তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে মামলা-জরিমানা করেন। এছাড়া মানুষকে বাড়ি থেকে অপ্রয়োজনে বের না হতে নিষেধ করেন।
পটিয়া প্রতিনিধি জানান, কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিনে পটিয়ায় মাস্ক ছাড়া ঘোরাঘুরির অভিযোগে ১৩৫০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল রবিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এসিল্যান্ড ও ইউএনওর পৃথক অভিযানে ৯টি মামলায় এই জরিমানা করা হয়েছে। পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ ও পটিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) নীলুফা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে পৃথক অভিযানে এ জরিমানা আদায় করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, করোনা সংক্রমণ মোকাবেলা করতে গত ১ জুলাই থেকে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে। লকডাউনের চতুর্থ দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ ও পটিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) নীলুফা ইয়াসমিন উপজেলার হাইদগাঁও ও বাসস্টেশন এলাকায় পৃথক অভিযান করেন। পটিয়ার ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নীলুফা ইয়াসমিন বলেন, লকডাউনের চতুর্থ দিনে ২টি অভিযানে ১৩৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান চলমান রাখা হবে।
হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, চলমান কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিন রবিবার উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কঠোর লকডাউনে নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। গতকাল ৩৫ টি মামলায় ৩৫ জন ব্যক্তিকে মোট ৯৩০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। দন্ডিত ব্যক্তিদের মধ্যে হাটহাজারী পৌরসভার রঙ্গিপাড়ার রাস্তায় একটি হোটেলে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ভেতরে কাস্টমার বসিয়ে খাবার বিক্রি করার দায়ে হোটেল মালিককে ১০০০/- টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয় এবং কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন মোটরসাইকেল, সিএনজি ও প্রাইভেট কারকেও যাচাই-বাছাই করে জরিমানা প্রদান করা হয়। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে সাধারণ জনগণের উদ্দেশে মাইকিং করে ও মৌখিকভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। লকডাউনের আগামী দিনগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে উপজেলা সহকারী কমিশন (ভূমি) শরীফ উল্লাহ গণমাধ্যমকে জানান।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, লকডাউন মেনে চলতে বাধ্য করতে রাঙ্গুনিয়ায় লকডাউনের চতুর্থ দিনেও কঠোর অবস্থান ছিল প্রশাসন। উপজেলার বিভিন্ন প্রবেশমুখে ছিল পুলিশের তল্লাশি চৌকি। রাস্তায় বের হলেই মানুষকে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালতের হাতে গুণতে হয়েছে জরিমানা। গতকাল সকাল থেকেই দিনব্যাপী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব চৌধুরী। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় তিনি ৭টি মামলায় ২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন। এসময় র‌্যাব-৭ এর একটি দল আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন। এভাবে গত চারদিনে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। চারদিন ধরেই সড়কে পুলিশের বিশেষ টহল দল, উপজেলা প্রশাসনের দুটি ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট দল এবং সর্বশেষ র‌্যাবের টহল দলও রাঙ্গুনিয়ায় লকডাউন কার্যকরে কাজ করছে। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় মূল সড়ক কেন্দ্রিক এলাকায় কঠোর লকডাউন পালিত হলেও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জের অলিগলিতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বিকালের দিকে উপজেলার কোদালা চা বাগান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে সাধারণ মানুষ আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দূর দূরান্ত থেকে মোটরবাইকে ছুটে এসেছে মানুষ। এমনকি অনেককে পরিবার নিয়েও ঘুরতে দেখা গেছে। ঘুরতে আসা এসব মানুষের মাঝে মাস্ক তো দূরের কথা স্বাস্থ্যবিধিরও বালাই ছিল না। একই অবস্থা দেখা গেছে, শিলক ইউনিয়নের বুচক্র হাটে গিয়েও। বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট ছিল খোলা। আপন মনে যে যার মতো করে বসে আড্ডা মারছেন। লকডাউন কার্যকরে এসব স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন এলে দৌড়ে পালালেও, উনারা ফেরত গেলে আবারও একই অবস্থা দেখা যায়। খবর নিয়ে জানা গেছে লকডাউনের চতুর্থদিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের হাট-বাজার ও অলিগলিতে একইভাবে লকডাউন না মেনে ঘুরাঘুরি করেছে মানুষ। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, লকডাউন কার্যকরে প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এমনকি জরিমানাও করা হচ্ছে। তবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনা মোকাবেলা ও সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সাধারণ মানুষকে নিজে থেকেই সচেতন হতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানে কঠোর লকডাউনে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় বান্দরবানে শনাক্তের হার খুবই উদ্বেগ জনক প্রায় ৫০%। সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়নে কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম এবং সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ সদস্যরাও টহলে রয়েছেন। বান্দরবান বাজারসহ স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে সেনাবাহিনী পাহাড়ায় রয়েছে। কোথাও জটলা এবং অপ্রয়োজনীয় ঘুরাফেরা করতে দেখলেই ধাওয়া করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেনাবাহিনীর একাধিক টিম গাড়ী নিয়ে হ্যান্ড মাইকে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারী নির্দেশনা মানতে সতর্কতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন। জেলা সদরের প্রবেশপথ সহ অভ্যন্তরীণ সংযোগ সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১৮টি মোবাইল কোর্ট টিম অভিযান পরিচালনা করছেন। ইতিমধ্যে লকডাউনে সরকারী নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় ৭১টি মামলা এবং অর্ধলক্ষাধিক টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এদিকে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে বান্দরবান জেলায়। গত চব্বিশ ঘটনায় বান্দরবান আরও ৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তারমধ্যে সদরে ৫ জন এবং নাইক্ষ্যংছড়ি ২, লামা ২ জন। এনিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এগারো’শ সতের জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের।
নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি জানান, নাইক্ষ্যংছড়িতে লকডাউনের ৪র্থ দিন পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ছিল। তারপরও মাঝে মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু কিছু দোকানদার দোকান খোলা রেখেছিল। এতে এসব দোকানদারদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা গুণতে হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১২ টার সময় উপজেলার বাইশারী বাজারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল হক অভিযান চালিয়ে ৪ দোকানীকে লকডাউন চলাকালীন দোকান খোলা রাখার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা আদায় করে। দোকানীর মধ্যে রয়েছে বিধান চন্দ্র ধর, মাচিংনু মার্মা, রুমি চাক ও নুরুল হাকিম। এদের প্রত্যেককে ৩ শত টাকা করে সর্বমোট ১২ শত টাকা জরিমানা করা হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল হক জানান, লকডাউন চলাকালীন আদেশ অমান্য করায় দণ্ড বিধি অনুযায়ী তাদের প্রথমবারের মত জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আগামীতে আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেল জরিমানা দুটোই করা হবে।
বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, লকডাউন কার্যকর ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে উপজেলা প্রশাসন বাঁশখালী কর্তৃক পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মুল) আইন- ২০১৮ এর আওতায় ১২টি মামলা দায়ের করে ৩৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। বাঁশখালীর উত্তরে ও দক্ষিণে দুটি মোবাইল টিম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী ও উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি মোহাম্মদ মাযহারুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এ সময় লকডাউন অমান্য করে বাইরে বের হওয়ায় ও গাড়ি চলাচল করায় এ জরিমানা করা হয় বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী। তিনি সবাইকে নিরাপদে রাখার জন্য গৃহে অবস্থান করার আহবান জানান। এদিকে, লোহাগাড়ায় লকডাউনের চতুর্থ দিন ১৬ মামলায় ৭ হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। রোববার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী। সাথে ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১০ পদাতিক ডিভিশনের আলিকদম ২৭ বীরের ক্যাপ্টেন মো. নাদিম মোস্তাফা, থানার এসআই দুলাল বাড়ৈ ও ভূমি অফিসের সমির চৌধুরী। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, চলমান লকডাউন অমান্য করে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে ঘোরাঘুরি করায় সংক্রমণ প্রতিরোধ আইন ২০১৮ এর ২৪ ধারায় ১৬ জনকে ৭ হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া মানুষকে ঘরমুখী করতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহালিশহরে এতিমখানায় পুষ্টিকর খাবার বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু ৫ জনের, নতুন আক্রান্ত ৫৫৯