‘এই জীবন তো একদিন চলতে চলতে থেমে যাবে/ কেউ তো জানে না কে কোথায় রবে?’- প্রখ্যাত শিল্পী প্রবাল চৌধুরীর এই গানে জীবনের বহমানতা উপলব্ধি করা যায়। ঘটনাবহুল জীবনে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনাগুলো যেন সহাবস্থানে থেকে নিজেদের প্রত্যক্ষ করছে। কখনো সুখের পাল্লা ভারী আবার কখনো দুঃখের পাল্লা ভারী হয়ে উঠছে। মানুষ মাত্রই দুঃখে বিচলিত হয়ে উঠেন। তবুও জ্ঞানীরা উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘মুষড়ে পড়ো না, সাহস নিয়ে এগিয়ে চলো’। এ.পি.জে আবদুল কালাম বলেছেন, ‘জীবন ও সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। জীবন শেখায় সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করতে আর সময় শেখায় জীবনের মূল্য দিতে’।
যে কোনো সময় দেহঘড়ির কাঁটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই বলে আমাদের দৈনন্দিন কোনো কাজই বন্ধ হতে পারে না। নশ্বর জীবনের এই সত্যকে মেনে নিয়ে পথ চলতে হবে। এক্ষেত্রে নিজেকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে ঘুম, বিশ্রাম, পড়াশোনা এবং বেঁচে থাকার প্রাসঙ্গিক সকল স্তরেই নিয়ম মত, ও পরিমিত হতে হবে। আমরা অতি সুখে যেমন গা ভাসিয়ে দিই তেমনি অল্প দুঃখে কাতর হয়ে পড়ি। আমরা মনে রাখবো জীবনকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে হলে নিয়মানুবর্তিতার বিকল্প নেই। কোনো পরিবারের প্রধান পুরুষ বা নারী যা-ই হোন না কেন তার সঠিক নিয়মশৃঙ্খলাকে অন্যান্য সদস্যরা অনুসরণ করে।
তাই বিষয়টি পরিবারের সাথেও সম্পৃক্ত। মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য সঠিক উপায় সম্পর্কে একে অপরকে ধারনা দেয়া। জনৈক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এত রাত জেগে থাকেন কেন? ৩/ ৪ ঘণ্টা ঘুমান মাত্র। এখন হয়ত বুঝতে পারছেন না কিন্তু ভবিষ্যতে… তিনি হেসে জবাব দিলেন, অভ্যাস হয়ে গেছে। বছর দুয়েক পরেই চিকিৎসকের মতামত, অপরিমিত ঘুমের জন্য তিনি প্রেসারে ভুগছেন। এ প্রসঙ্গে এ.পি.জে আবদুল কালামের উক্তিটি খুবই প্রাসঙ্গিক- ‘মানুষ তার ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারে না কিন্তু অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে। অভ্যাসই মানুষের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করে দেয়’।
শুধু ঘুম নয়, রাত জেগে পড়া কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় ব্যয় করা, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও পরিমিত না হলে এই শরীরকেই কষ্ট পেতে হবে। আগেও বলেছি, পরিবারের একজন অসুস্থ হয়ে পড়লে পুরো পরিবারকে ভুগতে হয়। তাই সময় থাকতে সঠিক নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে চলতে হবে। জীবন কিন্তু জীবনের নিয়মেই চলবে। রবি ঠাকুরের ভাষায়, ‘মানুষের মধ্যে দ্বিজত্ব আছে। মানুষ একবার জন্মায় গর্ভের মধ্যে, আবার জন্মায় মুক্ত পৃথিবীতে। মানুষের এক জন্ম আপনাকে নিয়ে, আরেক জন্ম সকলকে নিয়ে’। তাই সকলকে নিয়ে সুখী থাকতে হলে আমাদের সুশৃঙ্খল ও নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে জীবন যাপন করতে হবে।