বয়স অনুমান ৮/৯ বছর। শিশুটির বয়সটা এখন দূরন্তপনার। হৈ চৈ ছোটাছুটি, দৌড়ঝাঁপ, চিৎকার-করার! চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ সংলগ্ন দুই নাম্বার গেইট খুব ব্যস্ত এলেকা প্রতিদিন বের হলে একদল শিশু এক জায়গায় জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। হাতে থাকে একটি প্যাকেট। কখনো বুঝে উঠতে পারিনি প্যাকেটে কি। জানার কৌতূহল রয়ে গেলো। যেই শিশু গুলো মা-বাবার আদর-সোহাগ নিয়ে বেড়ে উঠার কথা ছিল কিন্তু আজ এসব থেকে অনেক দূরে শিশু গুলোর পরিবার কোথায় ? যদিও পরিবার থাকে আসলে কি সেই পরিবারেই কি তাদের আসল পরিবার। অনেক প্রশ্ন বিধেয় মনে। একদিন কর্ণফুলী বাজারে ওদের মধ্যে থেকে বেশ কয়েকজন শিশু দেখতে পেলাম। আপা, ব্যাগ ধরবো, দশটা টাকা দেন না। আমি বললাম, ঠিক আছে ব্যাগ ধরতে হবে না টাকা নাও। এভাবে চলতে থাকে অনেকদিন।এ ধরনের শিশুরা আসলে আমি টাকা দিই। বেশকিছু দিন থেকে দুইজন তরকারিওয়ালা ভাই আমার কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করে যাচ্ছে। আপা! আপনি দেখি প্রায় সময় টাকা দেন এই শিশুদের। টাকা দিয়া ওরা কি করে জানেন? আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এর মধ্যে আরেকজন এসে হাজির। তরকারিওয়ালা ধমক দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো: আপা, ওরা নেশা করে। আমার তো চোখ মাথার উপর উঠার অবস্থা। ততক্ষণে আমার বুঝতে দেরি হয়নি। ওভার ব্রিজের নিচে একদল পথশিশু যে নেশায় আসক্ত। এক পর্যায়ে একশিশুর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম চট্টগ্রামে অনেক এলাকাজুড়ে তাদের দল ও গ্যাং রয়েছে। তার দলে সবাই নেশাগ্রস্ত ভবঘুরে শিশু-কিশোর। একজনও নেশা ছাড়া নেই। একজনকে কাছে ডেকে বললাম আমি পথ শিশুদের জন্য কাজ করি। তোমাদের বাসস্থান, খাদ্য, শিক্ষা ব্যবস্থা করে দেব। আরেকজন বলে উঠলো এই কলিমুল্লা চলে আয় এই ম্যাডামের কথা বিশ্বাস করিস না, আমরা যেখানে আছি ভালো আছি। আমি বললাম, তোমরা ভালো জীবন চাওনা? -ম্যাডাম ভালো জীবন আপনাদের জন্য। আমরা যা করি তা আমাদের জন্য ভালো। দাঁড়াও তোমাদের ছবি তুলবো। ছবি তোলার সময় দৌড়ে পালিয়ে যায়। কারণ তারা মনে করেছে, তাদের ছবি পত্রিকায় প্রকাশ হবে। যেহেতু তারা নেশাগ্রস্ত, চুরি করে, তাই তাদেরকে পুলিশ ধরে নিয়ে যেতে পারে।এই শিশুরা ছোটখাটো অপরাধ করতে করতে বড় হয়ে গ্যাং তৈরি করবে, এক একজন হবে এক এক এলেকার সম্রাট। এই শিশুদের বয়স দুরন্তপনার, অথচ তাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে ভয়ংকর সব কাজ। এই বিষয়টা কৃর্তপক্ষকে একটু বিবেচনায় নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।