চার টুকরো ইলিশ মাছ সমাচার ও একজন রিকশাওয়ালার মনোবাসনা

রেশমা আনোয়ার | মঙ্গলবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২২ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

২০০০ সাল। চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। দিল্লি থেকে ফিরে ২ দিন কলকাতা ছিলাম। একদিন রাতে আমার হাজবেন্ড এর এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত ছিল। তখন টিভিতে অমিতাভ বচ্চনের কোন বানেগা ক্রোরপতি দেখাচ্ছিল। ইচ্ছে ছিল খাওয়া দাওয়া করে অনুষ্ঠান টা দেখে তবেই হোটেলে ফিরবো। যদিও তা আর হয়ে ওঠেনি ভিন্ন পরিস্থিতির কারণে। যাক, আসল কথায় আসি। গেলাম সেই রাতে দাওয়াত খেতে সন্ধ্যার পর। ডিনারের সময় হোলো। ৮ টা। দুই রুমওয়ালা বাসা। লিজ নিয়েছে। স্বামী, স্ত্রী ও এক সন্তান। তাই বাড়তি রুমের প্রয়োজন নেই। খেতে বসলাম। পোলাও, ইলিশ মাছ, হার্ড চিকেন, চিংড়ি মাছ ও সালাদ। খাওয়া শুরু। আমি প্রথমেই ইলিশ মাছের একটা টুকরা নিলাম সাথে সালাদ। কিছুক্ষণ পর ভাবী আমাকে এক টুকরো মুরগী তুলে দিচ্ছেলেন। আমি বাধা দিয়ে বললাম আমি আরেক টুকরো ইলিশ মাছ খাবো। মুরগি নিবো না (বলা বাহুল্য আমি ইলিশ মাছ দুই টুকরো না খেলে তৃপ্তি পাইনা)। তখন ভাবী জানালেন এখানে ৪ জনের জন্য ৪ টুকরো ইলিশ এবং সব আইটেমই ৪ টুকরো করে। শুধু চিংড়ি মাছ ৫ টুকরো। এক টুকরো ছেলের জন্য। ঠিক তাই। বাটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ব্যাপারটা সত্য। অর্থাৎ ওখানে উনারা যতো পিস দরকার ততো পিসই কিনে আনেন। বাড়তি কিছু না। আমার হাজবেন্ড উনার ভাগের ইলিশ মাছ টা আমাকে দিয়ে দিলো। সে মুরগী আর চিংড়ী দিয়ে খেলো। হোটেলে ফিরে ইচ্ছে মতো গালাগালি করলাম। কিপটা, কিপ্টুস আরও কতো কি! এ কেমন দেশ, কেমন মেহমানদারী! আমার হাজবেন্ড এর গালাগালির ভাষাই ছিল অন্য রকম। এখানে বলা যাচ্ছেনাগত সপ্তাহে একটা রিকশা নিয়ে একটা কাজে যাচ্ছিলাম। রিকশাওয়ালা বেশ গল্প জুড়ে দিলো। একটা পর্যায়ে গিয়ে বলল আমার একটা মেয়ে, বয়স ৭ বছর। বেশ কয়দিন ধরে ইলিশ মাছ খাইতে বায়না ধরছে। কিন্তু আপনিই কন একটা ছোট ইলিশ মাছের দাম ৬০০/৭০০ টাকা। আমার পক্ষে কি সম্ভব। যদিও সেদিন আমার বাসায় ইলিশ মাছ ছিল না। থাকলে হয়তো দু টুকরো দিতে পারতাম। খুব মনে পড়ে গেলো সেই ২০০০ সালের ইলিশ মাছের কাহিনী। তখন ভাবতে লাগলাম ঐ কিপ্টামি সিস্টেম টা আসলেই খুব প্রয়োজন আমার দেশের মানুষের জন্য। তাহলে ঐ রিকশাওয়ালা ২/৩ টুকরো মাছ কিনে মেয়ের আশা পূরণ করতে পারতো। ঐ দিনের ব্যাপারটাকে আমার বেশ পজিটিভ মনে হচ্ছিল। এমন কি একজন ভিক্ষুকও ১ টুকরো ইলিশ মাছ ইচ্ছে করলে কিনে খেতে পারবে। সময় মানুষকে কখন কোথায় নিয়ে যাবে আমরা কেউ বলতে পারিনা। লেখক : শিক্ষক

পূর্ববর্তী নিবন্ধফেনী সরকারি কলেজে বাস চাই
পরবর্তী নিবন্ধভ্যাকসিনের বৈশ্বিক সমতা