চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে এপ্রিল ও মে মাসে চিকিৎসা নিতে আসা জটিল কোভিড রোগীদের ৮০ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া করোনাভাইরাসের ‘বেটা ভ্যারিয়েন্টে’ আক্রান্ত ছিলেন বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকার দুই ডোজ নেওয়া পাঁচজনও রোগীও ছিলেন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ২৪ কোভিড রোগীর নমুনা থেকে পাওয়া ভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্স করে এক গবেষণার প্রথম ধাপে এ তথ্য মিলেছে। খবর বিডিনিউজের।
ঢাকার চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে জেনারেল হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনলজি বিভাগের গবেষকরা এ অনুসন্ধান চালান। তাদের করা জেনোম সিকোয়েন্সের ডেটা জার্মানি থেকে প্রকাশিত ভাইরাসের আর্ন্তজাতিক তথ্যভাণ্ডার ‘গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটায় (এওঝঅওউ) গৃহীত হয়েছে বলে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা জানান।
গবেষণায় অংশ নেওয়া চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আবদুর রব বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ২৪ জন কোভিড রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে ভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্স করা হয় এবং তাদের বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন আইসিইউতে ভর্তি থাকা ১০ জন রোগী এবং মৃদু বা মধ্যম মাত্রায় অসুস্থ ১৪ জন, যারা আইসোলেশনে বা আউটডোর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ডা. আবদুর রব জানান, জিন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আইসিইউতে ভর্তি জটিল রোগীদের ৮০ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া করোনভাইরাসের ধরনটিতে আক্রান্ত, যাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘বেটা ভ্যারিয়েন্ট’ বলছে। মৃদু ও মধ্যম মাত্রায় অসুস্থ রোগীদের ৭৫ শতাংশও বেটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ছিলেন। বাকি ২৫ শতাংশ রোগী ব্রিটেনে পাওয়া আলফা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ছিলেন বলে উঠে এসেছে গবেষণায়। তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা নেওয়া পাঁচজন রোগীও ছিলেন বলে জানান ডা. রব। তিনি বলেন, যেসব রোগীর ‘হাই ফ্লো অঙিজেন’ প্রয়োজন হয়েছিল, তাদের সবাই ছিলেন বেটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। আলফা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের অর্ধেকের উপসর্গ ছিল স্বল্প মাত্রার। আর বেটা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের ৯০ শতাংশের জ্বর, কফ ও সর্দির উপসর্গ ছিল।
চলতি বছরের মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলা ওই গবেষণার প্রথম পর্যায়ে ভারতে পাওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। সিএইচআরএফ এর বিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহার নেতৃত্বে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আদনান মান্নানের তত্ত্বাবধানে এ অনুসন্ধানে প্রধান গবেষক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আবদুর রব। তাদের সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. মিনহাজুল হক ও ডা. রাজদীপ বিশ্বাস। সিএইচআরএফ ও বাংলাদেশ জেনোমিঙ টিম সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।