চকরিয়ায় বেড়েছে গরু চুরি

উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় জনপ্রতিনিধিদের উদ্বেগ

চকরিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৩০ মে, ২০২৪ at ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে চকরিয়ায় বেড়েছে গরু চুরির ঘটনা। প্রতি রাতেই কোনো না কোনো ইউনিয়নে ঘটছে গরু চুরি। পাহারা দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না চুরির ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে গবাদি পশু গোয়াল ঘরে রাখা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন লালনপালনকারী কৃষক পরিবারগুলো।এদিকে হঠাৎ করে উপজেলাজুড়ে আশঙ্কাজনক হারে গরু চুরি বৃদ্ধির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত চকরিয়া উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে সিংহভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসন এবং থানা পুলিশের সহায়তা কামনা করেছেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ আলীসহ আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যবৃন্দ। জানা গেছে, অতীতে গরু চুরির যে একটা সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছিল, সেই সিন্ডিকেট তছনছ হয়ে গেছে অনেক আগেই। বর্তমানে প্রতিটি ইউনিয়নেই গড়ে ওঠেছে গরু চোরের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। আর এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এলাকার চিহ্নিত ও দাগি অপরাধীরা। এসব অপরাধী মূলত উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ক্ষমতাশালী জনপ্রতিনিধিদের আশ্রয়েপশ্রয়ে থেকে গরু চুরির কারবারে জড়িত রয়েছে। এজন্য এলাকার অসহায় কৃষক পরিবারগুলো এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করে না। এমনকি আইনি প্রতিকার পাওয়ার জন্য নতুন করে ঝামেলায়ও জড়াতে চান না ভুক্তভোগী কৃষক পরিবারগুলো। গত ২৩ মে ভোররাতে কাকারা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বার আউলিয়া নগর গ্রামের দলিলুর রহমানের কৃষক পুত্র মোহাম্মদ আলমগীরের গোয়াল ঘর থেকে ছোটবড় চারটি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। চুরির পর একটি মিনি পিকআপে তুলে এসব গরু চকরিয়া পৌরশহরের দিকে যেতে দেখেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ভুক্তভোগী গরুর মালিক মোহাম্মদ আলমগীর জানান, ভোরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘুম থেকে ওঠে বাড়ির উঠানের পাশের গোয়াল ঘরে দেখতে পান একটি গরুও নেই। পরক্ষণে জানতে পারেন একটি মিনি পিকআপে করে গরুগুলো পৌরশহর চিরিঙ্গার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। চারটি গরুর মধ্যে দুটি বড় এবং দুটি ছোট। এসব গরুর আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় চার লক্ষ টাকা।

আলমগীর বলেন, চুরি হওয়ার পর পুলিশের দ্বারস্থ হলেও এখনো পর্যন্ত কোন হদিস পাওয়া যায়নি গরুগুলোর। এই অবস্থায় জীবনের সকল পূঁজি হারিয়ে আমি পথে বসে গেছি। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় জানান, গত দুইদিনে তাঁর ইউনিয়নের তিন জায়গা থেকে ৬টি বড় সাইজের গরু চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে সংঘবদ্ধ চোরেরা। ইউনিয়নেরই একটি সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র সাম্প্রতিক সময়ে মাথাচাড়া দিয়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ডাকাতি ও গরু চুরি করে যাচ্ছে। এতে তিনটি দরিদ্র কৃষক পরিবার পথে বসে গেছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে আইনশৃঙ্খলা বলতে আর অবশিষ্ট কিছুই থাকবে না জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন চেয়ারম্যান।

চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জামাল হোসেন চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে মাথাচাড়া দিয়েছে গরু ও মহিষ চোর সিন্ডিকেট। সামনে রয়েছে কোরবানির ঈদ। কোরবানিকে সামনে রেখে অনেকে গবাদি পশু লালনপালন করে থাকেন ভাল দামে বাজারে বিক্রির জন্য। কিন্তু বর্তমানে গরু চোর সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় পশু লালনপালনকারী এবং খামারিরা পথে বসবে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলী আইনশৃঙ্খলা সভায় বলেন, সাম্প্রতিক গরু চুরি বৃদ্ধির বিষয়টি পুলিশের দৃষ্টিতে রয়েছে। গরু চুরি ঠেকাতে পুলিশের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি এবং এলাকার গ্রাম্য চোকিদারদেরও সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য বলা হয়েছে। কোথাও এই ধরণের ঘটনা ঘটে থাকলে তাত্‌ক্ষণিক পুলিশকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে যেসব কৃষকের গরু চুরি হয়েছে, তাদের লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে গরুগুলো উদ্ধার এবং কারা গরু চুরিতে সম্পৃক্ত রয়েছে তাদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় ব্রিজের গোড়ায় ধসের সংস্কার শুরু
পরবর্তী নিবন্ধবেইলি ব্রিজে ত্রুটি, দুদিন ধরে বন্ধ রুমা-থানচি সড়ক যোগাযোগ