গৃহস্থলি কাজে কাপ্তাই লেকের পানি, প্রভাব বিদ্যুৎ উৎপাদনে

মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাই | বৃহস্পতিবার , ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

কাপ্তাই লেকের পানি শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার হওয়ার কথা। এর পাশাপাশি লেকের পানিতে চলাচল করবে নৌযান, ব্যবহার হবে সেচ কাজ এবং মৎস্য চাষে। এ পানি বাসাবাড়িতে গৃহস্থালী কাজে ব্যবহারের কথা নয়। কিন্তু রাঙামাটি শহরে বসবাসকারী জনসাধারণের গৃহস্থালী কাজে ব্যবহারের জন্য বর্তমানে কাপ্তাই লেক থেকে দৈনিক ৪ কোটি লিটার পানি নেওয়া হচ্ছে। সেই হিসেবে মাসে ১২০ কোটি লিটার পানি কাপ্তাই লেক থেকে কমে যাচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে সরাসরি কাপ্তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এমনিতেই পার্বত্য এলাকায় বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। এতে লেকে পানি বাড়ছে না। উপরন্তু রুলকার্ভ অনুযায়ী লেকে যে পরিমাণ পানি থাকার কথা তাও থাকছে না। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, রাঙামাটি শহরে বসবাসকারী হাজারো পরিবার কাপ্তাই লেকে মোটর বসিয়ে পানি টেনে নিচ্ছে। এই পানি যাবতীয় গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। শহরের এমন কোনো বাসাবাড়ি নেই যেখানে কাপ্তাই লেকের পানির সঙ্গে মোটর বসানো নাই। এ ব্যাপারে রাঙামাটি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন আক্তার বলেন, পানি ছাড়া তো মানুষ বাঁচবে না। রাঙামাটিতে পানির অন্য কোনো উৎস নেই। তাই মানুষ কাপ্তাই লেক থেকে মোটরের সাহায্যে পানি এনে গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার করছে।

এ ব্যাপারে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, ১৯৬০ সালে যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এতদিন সেই মোতাবেক সব কিছু চলছিল। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে কাপ্তাই লেকে পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পাঁচটি জেনারেটর সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও একমাত্র পানি স্বল্পতার কারণে সবগুলো ইউনিট একযোগে চালানো যাচ্ছে না।

কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে কাপ্তাই লেকে রুলকার্ভের চেয়ে প্রায় ১০ ফুট পানি কম রয়েছে। যেসব টিলা এখন কাপ্তাই লেকের পানির নিচে ডুবে থাকার কথা, সেখানে সবগুলো ডুবন্ত টিলা এখন দৃশ্যমান। প্রতিদিন লেকের পানি হু হু করে কমে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে পরিমাণ পানি খরচ হবার কথা তার চেয়ে বেশি পানি খরচ হচ্ছে গৃহস্থালী কাজে। এভাবে চলতে থাকলে কাপ্তাই থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই লেকের পানির উপর শুধু রাঙামাটি শহরবাসী নয়, এর বাইরেও আরো ৬টি উপজেলার প্রায় সকল পরিবার নির্ভর করে। বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, লংগদু, বরকল, কাপ্তাই উপজেলার একাংশসহ বিশাল এলাকার মানুষ কাপ্তাই লেকের পানির উপর ভরসা করে পার্বত্য এলাকায় বসবাস করছে।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, তারা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বিপুল সংখ্যক গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির ব্যবস্থা করে আসছে। অনেক বাসাবাড়িতে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির প্রয়োজন মিটানো হচ্ছে। তারপরও অনেকে মোটর বসিয়ে কাপ্তাই লেক থেকে পানি টেনে আনছে বলেও প্রকৌশল অধিদপ্তর স্বীকার করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিচারকসহ সাক্ষ্য দিলেন আরো পাঁচ জন
পরবর্তী নিবন্ধপুলিশ সপ্তাহে পদক পেলেন র‌্যাব-৭ অধিনায়কসহ তিন কর্মকর্তা