বলা যায় কৃতজ্ঞতাবোধ শব্দটি কালের গর্ভে হারিয়ে গেলে, বিলীন হতে পারে উপকার শব্দটিও। মানুষ নিষ্পাপ হয়ে পৃথিবীতে আসে এরপর বেড়ে উঠে এবং পুরো জীবনই শিক্ষা গ্রহণ করে। কেউ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয় আর কেউবা কুশিক্ষা গ্রহণ করে। তবে নৈতিক শিক্ষাই মানব চরিত্রকে সুশোভিত করে। পরিবার থেকে শিশুর মধ্যে নৈতিকতা বোধ জাগ্রত করতে হবে। জীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধ করতে অবশ্যই নৈতিকতার মাধুর্যের উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। কৃতজ্ঞতাবোধ ও উপকার করার মনমানসিকতার সৃষ্টি হয় নৈতিক শিক্ষার মধ্যে দিয়ে। পূর্বপুরুষদের মুখে শুনেছি এমন একটা সময় ছিলো যে, একসময় জায়গা-জমি ক্রয়-বিক্রয়ে ছিলো মুখের কথার উপর, যাকে আমরা জবান বলি। সীমানা দেখিয়ে দিতেন এরপর বংশপরম্পরায় ভোগদখল করতো পরবর্তী প্রজন্ম। কখনো বিক্রয় করা ব্যক্তির ওয়ারিশ এসে জমির দাবি করতো না, শুধুমাত্র জবান ও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে লেনদেন হতো কিন্তু আজকাল এই বিশ্বাস শব্দটি মাঝেমধ্যে যেন ধরণীতে আবির্ভাব হয়। আবির্ভাব হয় কথাটি বলেছি এই কারণে, কারণ কোন ব্যক্তির মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার পর যখন তা উদ্ধার হয় তখন স্যোসাল মিডিয়ায় বা গণমাধ্যমে ফলাওভাবে প্রচার করা হয় কারণ এটি সাধারণ বিষয় না। এধরণের ব্যক্তি দুষ্প্রাপ্য এরা সংখ্যায় কম বলেই এটি অবাক হওয়ার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে অথচ হওয়ার কথা ছিলো কি?
হওয়ার কথা ছিলো এটা স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। অন্যের সম্পদ কখনো আমার হতে পারে না, এটিই মানবজাতির মূল আদর্শ, এটিই নিয়ম, এটিই আইন। কিন্তু সততা, সৎ জীবন-জীবিকা মূলত আমরা ভুলতে বসেছি। আমরা প্রতিনিয়ত লোভময় জীবিকায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি, অসৎভাবে জীবনগড়া যেন আধুনিকতা। কোন কিছু হারিয়ে যাওয়ার পর উদ্ধার হলে তা আমার কাছে স্বাভাবিক, আর না পাওয়াটাই অস্বাভাবিক। ফিরে পাওয়াটা মানবিকতা, না পাওয়াটা অসচ্চরিত্রতা।
মানুষ সামাজিক জীব, আমরা দলবদ্ধ বা সামাজিকভাবে জীবন পরিচালনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি এটি পূর্বপুরুষদের থেকেই চলমান। সামাজিকভাবে বাস করতে গিয়ে আমরা একে অপরের সহযোগিতা নিয়ে থাকি বা করি, এই সহযোগিতার পরিমাণ একেবারেই নগণ্য হলেও কৃতজ্ঞতা জানাতে কোন প্রকারেই কার্পণ্য করা যাবে না কারণ কৃতজ্ঞতাবোধ যার অন্তরে থাকেনা তার মনুষ্যত্ব নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
পরোপকারী মানুষ কখনো প্রতিদানের আশায় উপকার করেনা, এটা যেমন সত্য! তেমনি প্রতিদানের আশায় উপকার করে উপকারের তালিকায় রাখাটাও হীনম্মন্যতা। এটাকে আমরা শুধুমাত্র বিনিময় মাধ্যম বলতে পারি অন্য কিছু না। সৎ মানুষ যেভাবে মাঝে মধ্যে আবির্ভাব হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে কৃতজ্ঞতাবোধ শব্দটি কালের গর্ভে হারিয়ে গেলে, বিলীন হতে পারে উপকারী মানুষের সংখ্যা কিংবা উপকার শব্দটি। তাই এখন থেকেই সামান্য উপকার গ্রহণ করার সাথে সাথেই কৃতজ্ঞতা জানানো স্বভাবে পরিণত করে সংখ্যায় বাড়াতে হবে উপকারী মানুষের।