শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তিনি কোনো ‘অপরাধ করেননি’। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তো নিজে এ প্রতিষ্ঠানের মালিক নই। আমার আদর্শ কর্মসূচিতে কোনো ত্রুটি ছিল না। খবর বিডিনিউজের।
এত বড় কাজ করতে গেলে কিছু ভুল হতে পারে। আমরা তো ফেরেশতা নই। কিন্তু ভুল হলে তা ইচ্ছাকৃত নয়। এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে যান ইউনূস। শ্রমভবনের লিফট কয়েক মাস ধরে অচল থাকার কারণে সিঁড়ি বেয়ে ছয় তলায় উঠতে হয় তাকে। দুপুর ১টার দিকে শুনানি শুরু হয়। বিচারক ইউনুসকে এজলাসের চেয়ারে বসার অনুমতি দেন। শুনানি শুরু হলে তিনি দাঁড়িয়ে যান। আদালতে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনে ২৮ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়া হয়।
ইউনূস ছাড়াও এ মামলার অপর তিন আসামি হলেন– গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। আদালতে তারাও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। লিখিত বক্তব্যে আসামিরা বলেন, বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকসহ ৫০টির অধিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান ইউনূস গড়ে তুলেছেন। কোনো কোম্পানিতে তার নিজস্ব কোনো শেয়ার নেই। সুতরাং কোনো লভ্যাংশ বা লাভের টাকা কার পকেটে ঢোকে না।
যখনই দেশের গরিবদের একটা সামাজিক সমস্যা দেখেছেন, সেটার মাধ্যমেই একটা বিজনেস মডেল বানিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষা সমস্যার জন্য বানিয়েছেন গ্রামীণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য বানিয়েছেন গ্রামীণ কল্যাণ। এমন ব্যবসার ধারণা বা মডেল তৈরির জন্য যথেষ্ট সময় দেন, কিন্তু মালিকানায় কখনও নিজেকে জড়াননি। দেশে–বিদেশে কোথাও নিজের নামে কোনো জায়গা জমি গাড়ি–বাড়ি নেই তার।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেখান যিনি এতোগুলো ইম্প্যাক্ট তৈরি করেছেন। এতোগুলো বিদেশি ব্র্যান্ড কোম্পানিকে জয়েন্ট ভেঞ্চারে বাংলাদেশে এনেছেন। এত এত মানবসম্পদ তৈরি করেছেন। কোম্পানি আইনসহ বিভিন্ন আইনের ব্যাখ্যাসহ এই মামলাটি কেন চলতে পারে না, তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয় বক্তব্যে। সেখানে মামলার আসামিদের অব্যাহতির প্রার্থনা জানানো হয়।
সোয়া ঘণ্টার শুনানিতে এজলাসে কোনো কথা না বলেননি ইউনূস। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। শ্রম আইনে এ মামলাটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ১৬ নভেম্বর তারিখ রেখেছেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা ইসলাম।
বৃহস্পতিবার ইউনূসের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। মামলাটিতে এরই মধ্যে চারজনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়েছে। গত ১১ অক্টোবর মামলার বাদী এবং প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে গত ৬ নভেম্বর চতুর্থ সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া শেষ হয়েছে বলে জানান ইউনূসের আইনজীবী মামুন। ইউনূসের বিরুদ্ধে এ মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪–এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।