কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না : প্রধান উপদেষ্টা

যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো সতর্ক থাকতে হবে

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমান্ড সেন্টার গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। এই বছর দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না। ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করছে এবং মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়াচ্ছে, বলেন তিনি। দেশবাসীকে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে এ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি এবং পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, ডিএমপি, কোস্ট গার্ড ও বিশেষ শাখার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে সর্বোচ্চ আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। আমাদের অবশ্যই একটি কমান্ড সেন্টার বা কমান্ড সদরদপ্তর স্থাপন করতে হবে, যা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। তিনি বলেন, নতুন কমান্ড কাঠামো দক্ষতা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেশের সব বাহিনী ও থানা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের মানবাধিকার সুরক্ষার নির্দেশ দেন এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর যেকোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যদি আমরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে না পারি, তাহলে বৈশ্বিক ভাবমূর্তি আমাদের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে আমাদের সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হতে হবে। পুলিশকে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এমনভাবে অভিযান চালাতে হবে যাতে পবিত্র রমজান মাসে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যায়।

পুলিশ প্রধান বাহারুল আলম জানান, জুলাইআগস্ট মাসে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো হত্যাকাণ্ড এবং নৃশংসতার ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলা পর্যবেক্ষণের জন্য ১০টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে এই মামলাগুলোর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন এবং কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেন।

পুলিশ মহাপরিদর্শক জানান, বাংলাদেশ ইন্টারপোলের কাছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা অনুরোধ করেছি। আশা করি শিগগিরই সাড়া পাব।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, পুলিশের কড়া নিরাপত্তার কারণে রাজধানীতে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা কমেছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

অনলাইনে মামলা দায়ের পদ্ধতি চালুর নির্দেশ : ভোগান্তি ও অনিয়ম দূর করতে সশরীরে থানায় না গিয়ে অনলাইনে যাতে মামলা দায়ের করা যায়, সে ব্যবস্থা চালু করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে, কোনো মামলা দায়ের করতে হলে কাছের থানায় গিয়ে এফআইআর (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) দাখিল করতে হয়। এই প্রক্রিয়া জটিল এবং এতে অনিয়মের সুযোগ থাকে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, জনগণের সুবিধার্থে পুলিশের উচিত জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯এর মতো একটি বিশেষ ফোন নম্বর চালু করা। যাতে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সহজেই এফআইআর দায়ের করা যায়। তিনি বলেন, এতে আমাদের জনগণের মামলা দায়ের করার সময় যে হয়রানির মুখোমুখি হয়, তা কমবে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমকে যত দ্রুত সম্ভব অনলাইনে এফআইআর দায়েরের জন্য একটি নতুন ফোন নম্বর চালুর নির্দেশ দিয়েছেন মুহাম্মদ ইউসূস। এছাড়া অনলাইনে মামলা দায়ের সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ কল সেন্টার স্থাপনেরও নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ প্রধানকে। তিনি বলেন, যারা অনলাইনে মামলা দায়ের করতে সমস্যায় পড়বেন, তারা সহজেই কল সেন্টার থেকে সাহায্য নিতে পারবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাম্প্রদায়িক সহিংসতায় একজনেরও হত্যার প্রমাণ পায়নি পুলিশ
পরবর্তী নিবন্ধক্যান্সার নির্ণয়ে চট্টগ্রামে নেই বিশেষায়িত ল্যাব