কক্সবাজার সৈকতে ফের ভেসে এলো শত শত জেলিফিশ

বিজ্ঞানীদের মতে এগুলো খাওয়ার উপযোগী

কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোমবার , ৬ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের দরিয়ানগর সৈকতের তীরবর্তী বঙ্গোপসাগরে একটি টানা জালে ধরা পড়েছে ‘ধলা নুইন্যা’ (লবণেমইডেস রোবাস্টাস) ও ‘বল নুইন্যা’ (ক্রেম্বায়োনেলা) জাতের কয়েকশত জেলিফিশ। রোববার সকাল ৯টায় উপকূল থেকে মাত্র ৩শ মিটারের মধ্যে অন্যান্য মাছের সাথে জেলিফিশগুলো ধরা পড়লেও সেগুলো সৈকতেই ফেলে দিয়েছে জেলেরা। তবে এই দুই জাতের জেলিফিশ খাওয়ার উপযোগী বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. তৌহিদা রশিদ বলেন, সকালে দরিয়ানগর সৈকতে শত শত মরা জেলিফিশ ভেসে আসার খবর পেয়ে বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একটি গবেষক দলকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তারা জেলিফিশগুলো লবণেমইডেস রোবাস্টাস (ধলা নুইন্যা বা বর নুইন্যা) ও ক্রেম্বায়োনেলা (বল নুইন্যা) জাতের বলে শনাক্ত করেছেন।

বঙ্গোপসাগরে দীর্ঘদিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কক্সবাজার উপকূলে জেলিফিশের ব্যাপক বংশবৃদ্ধি ঘটেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান ড. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, গত বছর আগস্টে মাছ ধরা শুরুর পরও একই ঘটনা ঘটে।

রোববার সকালে সরেজমিন দরিয়ানগর সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, একটি টানা জালে অন্যান্য মাছের সাথে ধরা পড়েছে অসংখ্য জেলিফিশ। সৈকতের অন্তত ৩টি পয়েন্টে জেলিফিশগুলো পড়ে থাকতে দেখা যায়। আমাদের দেশে খাদ্য হিসাবে জেলিফিশের প্রচলন নেই বলে জেলেরা তাদের জালে ধরা পড়া জেলিফিশগুলো সৈকতেই ফেলে দেয়। পরবর্তীতে সেই মরা জেলিফিশগুলো পোকা মাকড়ের খাদ্য হয়।

এরআগে চলতি বছর এপ্রিল মাসে ‘ক্রেম্বায়োনেলা’ বা ‘বল নুইন্যা’ জাতের এবং গত বছর আগস্ট, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে লবণেমইডস রোবাস্টাস বা ‘ধলা নুইন্যা/বর নুইন্যা’ জাতের শত শত মরা জেলিফিশ ভেসে এসেছিল। এছাড়া গত জুলাইআগস্ট মাস জুড়ে জেলেদের জালে ‘গেলাস নুইন্যা’ প্রজাতির জেলিফিশটি বেশি আটকা পড়ে। আর ওই তিন প্রজাতির জেলিফিশই খাওয়ার উপযোগী বলে জানান বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জেলিফিশ গবেষক সোমিত্র চৌধুরী বলেন, বিশ্বে প্রায় ২৫০০ প্রজাতির জেলিফিশ রয়েছে। এরমধ্যে ১২ প্রজাতির জেলিফিশ খাওয়ার উপযোগী। আর খাওয়ার উপযোগী তিন প্রজাতির জেলিফিশই কক্সবাজার উপকূলে ধরা পড়ে।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. তৌহিদা রশিদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এক কেজি জেলিফিশের দাম ১০ ডলার বা প্রায় ১১শ টাকা। আর বিশ্বে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে জেলিফিশের। সেই জেলিফিশের শেষ পরিণতি কী না সৈকতের পোকামাকড়ের খাদ্য হিসাবে!

তিনি বলেন, শত শত বছর ধরেই সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসছে মরা জেলিফিশ। একসময় এই মরা জেলিফিশ বা নুইন্যা জমা হতো শহরের উত্তরাংশে বাঁকখালী নদী ও সমুদ্র মোহনার চরে। আর সেই ‘নুইন্যা’ থেকেই শহরের বিমানবন্দর সংলগ্ন ২নং ওয়ার্ডের নামকরণ হয়েছে নূনিয়ারছড়া, যা স্থানীয়ভাবে নুইন্যাছড়া নামে পরিচিতি পেয়েছে। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জেলিফিশ থেকে তৈরি হচ্ছে সার, কীটনাশক, ওষুধ ও কসমেটিক্সসহ নানা পণ্য। এশিয়ার কিছু অঞ্চলে জেলিফিশ হাঁড় ও পেশীর ব্যথা কমানোর ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। জেলিফিশ রপ্তানি করে বাংলাদেশও প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। আর সুনীল অর্থনীতিতেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বপ্নের ট্রেনের হুইসেল বাজল কক্সবাজারে
পরবর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে যুবদলের সভাপতিসহ আটক ৭