বেতন বৃদ্ধির দাবিতে চট্টগ্রাম ইপিজেডের অন্তত ২০টি কারখানায় গতকাল দিনভর বিক্ষোভ হয়েছে। একটি বিদেশি কারখানায় শ্রমিকদের বেতনভাতা সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি বাড়িয়ে দেয়ায় অন্যান্য কারখানাগুলোতেও একই পরিমান বেতনের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তীতে বেপজা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করে।
বেপজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকার তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বেতন ইপিজেড এর কারখানাগুলোতে ১২ হাজার ৮শ এবং ইপিজেড এর বাইরের কারখানাগুলোর জন্য ১২ হাজার ৫শ টাকা নির্ধারণ করে। এটা যে কোনো শ্রমিকের মজুরি। কিন্তু তিন মাস আগে যোগ দেয়া শ্রমিকের সাথে তিন বছর আগে যোগ দেয়া শ্রমিকের মজুরি একই হয়ে যাওয়ায় বেপজা কর্তৃপক্ষ কারখানা মালিকদেরকে নতুন এবং পুরাতন শ্রমিকদের মধ্যে দৃশ্যমান পার্থক্য আনার জন্য বছরভিত্তিক কিছু বাড়তি বেতন দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। এতে কোন কোন কারখানা প্রতি বছরের জন্য ৫০ টাকা, কোন কারখানা ১০০ টাকা, কোন কারখানা ২০০ টাকা করে দৃশ্যমান পার্থক্য করে বেতন প্রদান করে। আর এই বিষয়টিই মূলতঃ সংকটের সৃষ্টি করে। ভালো ব্যবসা করছে এমন কারখানাগুলোর মধ্যে কোরিয়ান কোম্পানি ইয়ংওয়ান যে পরিমান বাড়তি বেতন দেয় অপেক্ষাকৃত দুর্বল একটি কারখানার পক্ষে ওই পরিমান বাড়তি বেতন দেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু দুর্বল কারখানার শ্রমিকেরাও ইয়ংওয়ানের শ্রমিকের সমান মজুরির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।
একাধিক কারখানা মালিক গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রতিটি কারখানাই সরকার নির্ধারিত বেতন পরিশোধ করছে। কিন্তু বছর ভিত্তিক দৃশ্যমান পরিবর্তন আনার জন্য বাড়তি বেতন দিতে গিয়েই সংকট তৈরি হয়। ভালো কারখানাগুলো বেশি ব্যবসা করছে। তারা দিতে পারছে। কিন্তু সাব কন্ট্রাক্ট করে কোনরকমে টিকে আছে এমন কারখানার পক্ষে যেখানে বেতনের যোগান দেয়াই কঠিন হয়ে উঠছে সেখানে বাড়তি টাকার যোগান দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও বেপজা কর্তৃপক্ষের অনুরোধে সকল কারখানার মালিকই শ্রমিকদের চাকরির বয়সের উপর বছরভিত্তিক একটি ইনক্রিমেন্ট প্রদান করে বেতন পরিশোধ করার চেষ্টা করছে। এখানেই এক কারখানার সাথে অন্য কারখানার শ্রমিকদের বেতনের পার্থক্য তৈরি হয়। আর এটা নিয়ে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করে।
গতকাল একটি শীর্ষস্থানীয় কারখানার মালিক পুরো বিষয়টির জন্য সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করে বলেছেন, বেপজা কর্তৃপক্ষ বছরভিত্তিক বাড়তি বেতনের দৃশ্যমান পার্থক্য করতে বলেছে। এটা না করে তারা যদি সব কারখানার জন্য একটি ‘অংক’ নির্দিষ্ট করে দিতো তাহলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
ইপিজেডের বিনিয়োগকারীরা শংকিত বলে উল্লেখ করে বেপজিয়ার প্রেসিডেন্ট এসএম খান বলেন, এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। বিষয়টিকে আরো সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রন করা দরকার ছিল। ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে একটি বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা দেয়া হয়েছে। কারখানার মালিকেরা তা পরিশোধ করছে, করবে। কিন্তু নির্বাচনের পরদিনই সকালে হুট করে কারখানার গেটে শত শত শ্রমিকের বিক্ষোভ রহস্যজনক। জিম্মি করে ফেলার মতো অবস্থা। তিনি শ্রমিক বিক্ষোভের পেছনে গুজব কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন। অপর একজন কারখানা মালিক বলেন, শ্রমিকদের সাথে বাইরের লোকজনও দেখা গেছে। নির্বাচনের পরদিন কোন বিশেষ মহল অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। গতকালও সকাল থেকে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছে। কোন কারখানা বাড়তি বেতন পরিশোধের অঙ্গিকার করে, আবার কোনটি ক্ষমা চেয়ে কোনরকমে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। তবে শেষপর্যন্ত এই শান্ত পরিস্থিতি যাতে বজায় থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য বেপজা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবাহান গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করলেও পরবর্তীতে আমাদের সাথে আলোচনা এবং মালিকদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তারা কাজে ফিরে গেছে।