বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্যে অবাক হওয়ার কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি যতটা উদ্বিগ্ন তার থেকে বেশি অবাক যে, উনি এ ধরনের কথা কেন বললেন। আমি এটার কোনো কারণ খুঁজে পাই না। আমি কোনো অবস্থাতেই মনে করি না যে, ভারতের সাথে আমাদের কোনো যুদ্ধ বিগ্রহ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। উনি এটা নিজের দেশের কনজাম্পশনের জন্য বলেছেন কিনা, সেটাও আমাদের বুঝতে হবে।
প্রবল গণআন্দোলনে ক্ষমতা হারানো বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান। এখনও তিনি সেখানেই আছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক এখন কেমন হবে, তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার লক্ষ্ণৌয়ে ভারতের তিন বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের এক যৌথ সম্মেলনে রাজনাথ সিং বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ভারত একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। তবে অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখি হলে শান্তি রক্ষার স্বার্থে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার। খবর বিডিনিউজের।
রাজনাথ সিংয়ের ওই বক্তব্যকে ‘কাজের কথা বলতে এসে আজেবাজে বকা’ হিসাবে বর্ণনা করেন এক সময় কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, উনি যেভাবে বলেছেন, এটা বিটিং অ্যারাউন্ড দ্য বুশ। কারণ ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে তো ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতির কোনো কারণ দেখি না, বা হামাসের সাথে যে সমস্যা হচ্ছে, তাতে করেই বা ভারতের এখানে কী সম্পর্ক? আর ইউক্রেন এবং হামাসের সাথে বাংলাদেশ কী করে তুলনীয় হয়, এটাও আমার বোধগম্য নয়।
বাংলাদেশ এক্ষেত্রে কেবল অনুমান নির্ভর প্রতিক্রিয়া দেখাতে চায় না মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, আমি কোনো নি–জার্ক রিঅ্যাকশন দেখাতে চাই না; আমরা অবশ্যই দেখব যে উনি এটা কেন বলেছেন।
রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য ভারতের হুমকি কিনা, এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি এখনও মনে করি যে, এটা উনার নিজস্ব, অভ্যন্তরীণ কনজাম্পশনের জন্য বলেছেন। কাজেই আমি কোনো স্পেকুলেট করতে চাই না।
ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি এই মুহূর্তে এ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। কারণ আমি বললাম যে এটুকু যোগাযোগ হয়েছে ওটুকু যোগাযোগ হয়েছে। বরং আমি বলেছি যে, নি–জার্ক কোনো রিঅ্যাকশন দেখাতে চাই না আমরা। আমরা অবশ্যই এটা দেখব যে কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, এটা আমাদেরকে দেখতে হবে, এটা আমরা দেখব।
ভারত শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিলে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, স্বাভাবিকভাবেই যে কোনো দেশ যে কাউকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে। দেওয়া উচিত কিনা, এক্ষেত্রে সেটা দেখার বিষয়, আমরা তা দেখব।
রাজনৈতিক আশ্রয় দিলে বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানাবে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দেখা যাক; সেই পরিস্থিতিতে আপনারা প্রশ্ন করলে আমরা উত্তর দেব। আপাতত এটা থাকুক।
আরো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয় : ঢাকা নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকে স্থান দিতে পারবে না বলে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে যেসব দেশ ও সংস্থা আরও রোহিঙ্গা শরণার্থী গ্রহণের সুপারিশ করবে, তাদেরকেই এই বোঝা ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ইউএনএইচসিআরকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি যে, আমাদের পক্ষে আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়।
তিনি উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা নতুন আগতদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছিল, যা সরকার দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। উপদেষ্টা ইঙ্গিত করেন, মানবিক কারণে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছে।