অসুস্থ শিশু, রিকশাচালক বাবা আর বেপরোয়া একটি ট্রাক

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ৪ জুলাই, ২০২২ at ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ

মো. জমির উদ্দিন (৪৪), পেশায় রিকশাচালক। অভাবের সংসারে তার স্ত্রীসহ রয়েছে তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। এর মধ্যে ছেলে শিশুটি সবার ছোট, বয়স মাত্র আট মাস। ক’দিন ধরে ঠান্ডাজনিত কারণে সে অসুস্থ। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এদিকে পিতা জমিরের হাতে টাকা নেই। কয়েকজনের কাছে ধার চেয়েও পাননি। সকালে তিনি বাড়ি থেকে রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন সারাদিন যা আয় করবেন তা দিয়ে সন্ধ্যায় শিশুকে ডাক্তার দেখাবেন। কিন্তু তার সেই আশা আর পূরণ হয়নি। সড়কে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নেয় তার প্রাণ।
গতকাল রোববার দুপুরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের বুইজ্জার দোকান এলাকায় ট্রাক চাপায় মারা যান তিনি। এ সময় রিকশায় থাকা মো. হৃদয় (৩৫) নামে এক যাত্রী আহত হন। তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে জানা যায়। নিহত জমির একই ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের বুইজ্জার দোকান সিকদারপাড়া এলাকার এখলাস মিয়ার পুত্র। চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিচ আজগর বলেন, একটি খালি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে পশ্চিম দিক থেকে চন্দ্রঘোনার দিকে যাচ্ছিল। বুইজ্জার দোকান এলাকায় এলে অন্য একটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে চাপা দেয়। রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. মাহবুব মিল্কী বলেন, ট্রাকের সাথে
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখী সংঘর্ষ হলে রিকশাচালক ছিটকে পড়ে যায়। পরে ট্রাকের পেছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় জমির। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। লাশটি স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনাময়নাতদন্তে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
নিহতের স্ত্রী মুন্নী আক্তার বলেন, দুর্ঘটনার মাত্র এক ঘণ্টা আগে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। সকালে রিকশা চালিয়ে সন্ধ্যায় বাচ্চাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। একজন যাত্রীকে মরিয়মনগর চৌমুহুনী দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। যাওয়ার পথেই এই ঘটনা ঘটে।
লোহাগাড়ায় লরির ধাক্কায় আহত ৩ : লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, লোহাগাড়ার আমিরাবাদে মালবাহী লরির ধাক্কায় তিন সিএনজি অটোরিকশা আরোহী আহত হয়েছেন। গতকাল রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রাম-কঙবাজার মহাসড়কে ইউনিয়নের তজু মুন্সির গ্যারেজ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের হিন্দুর হাট এলাকার ডেজি আক্তার (৩৮), চুনতি ইউনিয়নের সাতগড় এলাকার মনোয়ারা বেগম (৬৫) ও একই এলাকার মো. তাহসিন (১২)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চট্টগ্রামমুখী মালবাহী লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একইমুখী সিএনজি অটোরিকশার পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে সিএনজি অটোরিকশার তিন আরোহী আহত হন। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। দুর্ঘটনায় সিএনজি অটোরিকশাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থলের অদূরে বার আউলিয়া কলেজ গেইট এলাকায় লরিটি আটক করে স্থানীয়রা।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাকসুদ আহম্মেদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি হাইওয়ে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।