দিনের শুরুতে দেশের ৪৯ জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে গেলেও গতকাল রোববার সন্ধ্যা নাগাদ তা আরও দুই জেলায় বিস্তৃত হওয়ার খবর দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিন সন্ধ্যার বুলেটিনে সংস্থাটি জানিয়েছে, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আর তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে রাজশাহী, টাঙ্গাইল, যশোর ও কুষ্টিয়ার উপর দিয়ে। এর বাইরে মৌলভীবাজার, চাঁদপুর জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগে। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, বৃষ্টিপাত না থাকায় তাপপ্রবাহের এ প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। ২৩–২৪ এপ্রিল পর্যন্ত এমন তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এপ্রিল যে সবচেয়ে উষ্ণতম মাস তা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এ মাসে তাপপ্রবাহের এমন প্রবণতা স্বাভাবিক। গেল বছর সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ঈশ্বরদীতে, আর ঢাকায় ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। এবারও তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা রয়েছে। কয়েকদিন পর তাপমাত্রা কমতে পারে।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে শনিবার; সেদিন চুয়াডাঙ্গায় পারদ উঠেছিল ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র গরমের কারণে শনিবার স্কুল–কলেজে সাতদিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। পরদিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে অনলাইনে ক্লাস চালানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁসের মধ্যে গতকাল মেহেরপুর, সিলেট ও নরসিংদীতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার মৃত্যু হয়েছিল অন্তত দুজনের। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু–এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
রাজশাহীতে ঝরে যাচ্ছে আমের গুটি : টানা তাপদাহের কারণে রাজশাহী অঞ্চলে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। এরই মধ্যে অনেক বাগানের অন্তত ২০ শতাংশ গুটি ঝরে গেছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খরা দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকলে গুটিও ঝরতে থাকবে। সে ক্ষেত্রে বাগানে সেচ দিতে হবে ঘন ঘন।
বৈরী আবহাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রাজশহী অঞ্চলের আম চাষিরা। আমের গুটি রক্ষায় প্রতিদিন পানি স্প্রে করে গাছ ধুয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক উম্মে সালমা বলেন, সব উপজেলায় খরা মোকাবিলায় আমের গুটি টিকিয়ে রাখতে চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা আম চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।