চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নে দুর্ঘটনার হটস্পট জাঙ্গালিয়া ৪ লেনে উন্নীত হচ্ছে। বহু বছর ধরে মৃত্যুফাঁদ হিসেবে পরিচিত এই অংশে নিয়মিত দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। অবশেষে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) দুর্ঘটনাপ্রবণ জাঙ্গালিয়াকে নিরাপদ ও গতিশীল করতে চার লেন বিশিষ্ট মহাসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
জানা যায়, গত ১৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে জাঙ্গালিয়া এলাকায় দ্রুতগতির একটি বাইক গতিরোধকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে সাকিবুল হাসান (২৫) নামে এক পর্যটক নিহত হয়েছেন। গত ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে একইস্থানে ৩ সড়ক দুর্ঘটনায় নারী–শিশুসহ ১৬ জনের প্রাণহানী ও ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ২০২০ সালের ২১ মার্চ একই স্থানে লবণবোঝাই ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে লেগুনার ১৫ যাত্রী নিহত হয়েছিল। এছাড়া জাঙ্গালিয়ায় প্রতিনিয়ত ছোট–বড় দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, দুই পাশে ঘন বনাঞ্চল, লবণবাহী ট্রাক থেকে নিঃসৃত পানি, অপ্রশস্ত সড়ক, ঢালু সড়ক ও দূর–দূরান্ত থেকে আসা চালকদের এই সড়কের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে মূলত জাঙ্গালিয়া সড়ক দুর্ঘটনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, অপ্রশিক্ষিত চালক, গাড়ির এলইডি হেডলাইটের আলো, মহাসড়কে নিষিদ্ধ ছোট যানবাহন চলাচল, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলাচল ও সড়কে দুপাশে অসমান অংশসহ কয়েকটি কারণে এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে বেশি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক ও জনপথ (সওজ) অফিস সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা জাঙ্গালিয়ায় ৯০০ মিটার ৪ লেনে উন্নীত ও মাঝখানে ডিভাইডার দেয়া হবে। এছাড়া সাতকানিয়া রাস্তার মাথা এলাকা থেকে জাঙ্গালিয়ার আগে পর্যন্ত মহাসড়কে উভয় পাশে ৫ ফুট করে প্রশস্ত করা হবে। উক্ত প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, জাঙ্গালিয়া দিয়ে গাড়ি চালানো মানেই আতঙ্ক নিয়ে পথ পাড়ি দেওয়া। এই কথাটি এখন সকল মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। দুর্ঘটনার হটস্পট জাঙ্গালিয়া ৪ লেনে উন্নীত হলে দীর্ঘদিনের জনদুর্ভোগ, প্রাণহানি ও অবকাঠামোগত সংকট দূরীকরণের পথে একটি বড় অগ্রগতি অর্জন হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। জাঙ্গালিয়াসহ চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অধিকাংশই মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিয়ন্ত্রণ হারানো, মোটরসাইকেল দুঘটনা ও ক্রসিং সংক্রান্ত। অনেক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে অন্ধকারে বা যানজটের সময় হঠাৎ লেন পরিবর্তনের কারণে।
নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া শাখার সাবেক সভাপতি মোজাহিদ হোসাইন সাগর জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি ইউনিয়নের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা ৪ লেনে উন্নীত ও সাতকানিয়া রাস্তার মাথা এলাকা থেকে জাঙ্গালিয়া পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে ৫ ফুট করে প্রশস্ত করার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমবে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার দাবিও জানিয়ে আসছি। পুরো মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত হলে যাত্রী এবং পণ্যের নিরাপদ ও দ্রুত পরিবহন নিশ্চিত হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ–সহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল আলম জানান, জাঙ্গালিয়া অংশে ৯০০ মিটার ৪ লেনে উন্নীত ও সাতকানিয়া রাস্তার মাথা এলাকা থেকে জাঙ্গালিয়ার আগে পর্যন্ত সড়কের উভয়পাশে ৫ ফুট প্রশস্ত করার প্রকল্পটি টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।












