৪ দাবি আদায়ে সরব শিক্ষার্থীরা

চবিতে ছাত্রীকে নিপীড়ন গ্রেপ্তার ৫ জনের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সংবাদ সম্মেলন আজ

চবি প্রতিনিধি | সোমবার , ২৫ জুলাই, ২০২২ at ৪:০৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় আটক ৫ জনের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার এ আবেদন করা হয়। ৫ জনকে আটক করলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামেনি। তারা প্রতিদিন কাউন্টডাউন করছেন এবং বেঁধে দেওয়া সময়ে বাকি তিন দাবি পূরণে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। গতকালও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনে প্রদীপ জ্বালিয়ে অবস্থান করেন। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা। এদিকে শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম ও চলমান বিষয় নিয়ে আজ সোমবার বেলা ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান। রিমান্ড আবেদনের ব্যাপারে হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি রুহুল আমিন সবুজ বলেন, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় আটক ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছি। মাননীয় আদালত আবেদন গ্রহণ করে শুনানির জন্য রেখেছেন। মঙ্গলবার এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশ পেলে আমরা তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব। এর আগে গত শুক্রবার রাতে ৪ জন এবং শনিবার বিকালে একজনকে আটক করে র‌্যাব-৭। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। আটক ৫ জন হলেন চবি ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আজিম ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুল আবছার বাবু। এই দুজনকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজীবন বহিষ্কার করেছে। বাকিরা হলেন হাটহাজারী কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. নুর হোসেন শাওন, একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. মাসুদ রানা ও সাইফুল ইসলাম।
হাটহাজারী কলেজের অধ্যক্ষ গোল মোহাম্মদ বলেছেন, ছাত্রী নিপীড়নে জড়িত হাটহাজারী কলেজের ৩ ছাত্রকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
চার দাবি আদায়ে সরব শিক্ষার্থীরা : আগামী দুদিনের মধ্যে চার দফা দাবি মেনে না নিলে লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল রাত ৮টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়নের ঘটনার জের ধরে বিগত বছরগুলোর সকল ধরনের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে গত ২০ জুলাই ভিসি ভবনের সামনে আন্দোলনে নামি আমরা। সেই আন্দোলন থেকে আমাদের চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। সেই সময় চার দফা দাবি চার কার্যদিবসের মধ্যে বাস্তবায়িত না হলে প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করবে মর্মে চার দাবির কাগজে স্বাক্ষর করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম। আমরা সম্প্রতি দেখেছি ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়নের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রশাসনের এই তৎপরতাকে সাধুবাদ জানাই। তবে একজন পলাতক। এই বিষয়টি এখনো আশঙ্কাজনক।
ইতোমধ্যে দুই কার্যদিবস পার হয়ে গেছে। বাকি আছে আর দুই কার্যদিবস। এই দুই কার্যদিবসের মধ্যে ৪ দাবির বিষয়গুলো এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে। সেগুলো হলো অভিযুক্তদের একজন এখনো পলাতক, সেই একজনকে খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করতে হবে। যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে চলমান বাকি ৩ ঘটনার বিচারের রায় এখনো আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে সেই ঘটনাগুলোরও সুষ্ঠু বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল গঠন করা হয়েছে কিনা কিংবা কবে হবে, সেখানে এক মাসের সর্বোচ্চ সময়সীমা রাখা হবে কিনা, সেই বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা প্রদানের জন্য কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বা হয়েছে সেই বিষয়ে জানানো হয়নি। মেয়েদের হল ও মেডিকেলে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা কবে তুলে নেওয়া হবে সেই বিষয়েও কোনো কিছু জানানো হয়নি।
১৭ জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন এলাকায় দুর্বৃত্তদের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হন এক ছাত্রী। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিলে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন ওই ছাত্রী। এ ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবান্দরবানে ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান
পরবর্তী নিবন্ধআইসক্রিম খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা