জুলাই আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোনালাপের ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং ৩টি মোবাইল নম্বরের সিডিআর জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ফোনালাপ গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ ৫৩তম সাক্ষী উপস্থাপনের সময় বাজিয়ে শোনানো হয়েছে, যেটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
শেখ হাসিনার এই চারটি ফোনালাপের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও তার আত্মীয় শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে একটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে দুটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামালের একটি ফোনালাপ রয়েছে। এদিন ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এ মামলার বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা।
আদালতে তানভীর হাসান জোহা বলেন, তদন্তকালে আমি বিটিআরসি, এনটিএমসি, ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর হতে বিভিন্ন অডিও ক্লিপ, ভিডিও ফুটেজ, সিডিআর, আইপিডিআর, সিসি ক্যামেরা ফুটেজসহ ডিজিটাল ফরেনসিক বিষয় বিধি মোতাবেক বিভিন্ন আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করি। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোনালাপের ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং ৩টি মোবাইল নম্বরের সিডিআর এনটিএমসির সহকারী ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রশিক্ষক সাদি মোহাম্মদ রিফাতের উপস্থাপন মতে বিধি মোতাবেক জব্দ করি। সংগৃহীত অডিও ক্লিপগুলোর পর্যালোচনাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ফজলে নূর তাপসের একটি ফোনালাপ, যা একটি ডিভিডিতে ধারণ পূর্বক তাদের প্রামাণ্য কণ্ঠস্বর সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক শাখা, সিআইডি ঢাকায় প্রেরণ করি। এই ফোনালাপের শুরুতে কলকারীসহ অপর একজন ব্যক্তির কথোপকথন শোনা যায়। শেখ হাসিনার ফোনালাপ শেষে অন্য এক পুরুষের কণ্ঠস্বর শোনা যায়।
তানভীর জোহা বলেন, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের পরিদর্শক রুকনুজ্জামান গত ১৬ জানুয়ারি ওই ফোনালাপ পরীক্ষান্তে নিশ্চিত করেন যে, অডিও ক্লিপে ফোনালাপকারী একজন শেখ হাসিনা ও অপরজন ফজলে নূর তাপস। ওই মতামত আমি তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কের কাছে হস্তান্তর করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসির সঙ্গে ফোনালাপের অডিও সম্পর্কে তানভীর জোহা বলেন, অডিও সমূহ পর্যালোচনাকালে আমি শেখ হাসিনা ও তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এস এম মাকসুদ কামালের ফোনালাপ শনাক্তপূর্বক একটি সিডি ডিস্কে সংরক্ষণ করে তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কের নিকট হস্তান্তর করি। তাদের দুজনের প্রামাণ্য কণ্ঠস্বরসহ উহার একটি কপি পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাব সিআইডি ঢাকায় প্রেরণ করি। এসআই শাহেদ জুবায়ের লরেন্স পরীক্ষান্তে রিপোর্টসহ মতামত প্রদান করেন। মতামতে তিনি উল্লেখ করেন যে, উক্ত ফোনালাপটি ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এস এম মাকসুদ কামালের। উক্ত মতামত আমি তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কের নিকট হস্তান্তর করি।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে ফোনালাপের অডিও সম্পর্কে তানভীর জোহা বলেন, উক্ত অডিওসমূহ পর্যালোচনা অব্যাহত থাকাকালীন সময় হাসানুল হক ইনু এবং শেখ হাসিনার ৩টি ফোনালাপ শনাক্তপূর্বক একটি ডিভিডি ডিস্কে সংরক্ষণ করে তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কের নিকট হস্তান্তর করি। এসআই শাহেদ জুবায়ের লরেন্স পরীক্ষান্তে উক্ত ফোনালাপগুলো শেখ হাসিনা এবং হাসানুল হক ইনুর কণ্ঠস্বর মর্মে মতামত প্রদান করেন।
তানভীর জোহা আরও বলেন, ওই ফোনালাপ সমূহ পর্যালোচনা করে দেখা যায় গত ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা লেথাল উইপন ব্যবহার করে সরাসরি গুলির নির্দেশ দিয়েছেন এবং ড্রোনের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয় পূর্বক হেলিকপ্টার থেকে বোম্বিং করা, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করাসহ আন্দোলনকারীদের রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের ফাঁসি দেওয়ার কথা বলেছেন। তারা উক্ত ফোনালাপে ইংল্যান্ডের উদাহরণ দিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের দমন করতে বলেছেন। উক্ত ৫টি অডিও কথোপকথন সম্বলিত ৩ সিডি অদ্য ট্রাইব্যুনালে দাখিল করলাম।
পরে তানভীর হাসান জোহাকে জেরা করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত শেখ হাসিনার আইনজীবী আমির হোসেন।