হাসপাতালের অচল ভারী যন্ত্রপাতি মেরামতের জটিলতা কাটবে?

রতন বড়ুয়া

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৭ সদস্যের কমিটি | রবিবার , ১১ জুন, ২০২৩ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিশাল সংখ্যক গরিব রোগীদের চিকিৎসা সেবায় একমাত্র ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। এ হাসপাতালের এমআরআই, ক্যাথল্যাব (এনজিওগ্রাম), ব্র্যাকিথেরাপি ও মেমোগ্রাফিসহ বিশেষ বিশেষ ভারি যন্ত্রপাতিগুলো এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অচল পড়ে আছে। এসব মেশিনের প্রতিটির দাম কোটি টাকার বেশি। কোনোটির দাম ৬ কোটি, কোনোটি আবার দশ কোটি টাকা। দফায় দফায় তাগিদ দেয়ার পাশাপাশি ডজন খানেক চিঠি চালাচালির পরও এসব ভারি যন্ত্রপাতি সচল করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কেবল চমেক হাসপাতালই নয়, দেশের প্রায় সরকারি হাসপাতালেই এমন চিত্র। এমআরআই, ক্যাথল্যাব, সিটি স্ক্যান, ব্র্যাকিথেরাপিসহ বিশেষ বিশেষ ভারি মেডিকেল যন্ত্রপাতি দীর্ঘ দিন ধরে অচল অবস্থায় পড়ে থাকছে। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো পড়ে থাকলেও এসব মেডিকেল যন্ত্রপাতি দ্রুত সচল করতে পারছে না হাসপাতালগুলো। এর কারণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেএসব ভারি মেডিকেল যন্ত্রপাতি সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপো (সিএমএসডি)’র মাধ্যমে ক্রয় করে হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ দিয়ে থাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাই এ ধরণের কোনো যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়লে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রথমে সিএমএসডি বা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হয়। পরে সিএমএসডি সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ওই যন্ত্র মেরামতের জন্য তাগিদ দিয়ে থাকে। সাধারণত ওয়্যারেন্টি সময় থাকা পর্যন্ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দ্রুত সময়ে মেশিন মেরামতে সচেষ্ট থাকে। তবে ওয়্যারেন্টি সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে জটিলতার সৃষ্টি হয়। মেশিন মেরামতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত বিল দাবি করে থাকে। এ নিয়ে চলে দর কষাকষি। এতে করেই পার হয়ে যায় অনেক সময়।

তবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন কম্প্রিহেনসিভ মেইনট্যানেন্স কন্ট্রাক্ট (সিএমসি) বা মেইনট্যানেন্স চুক্তি ছাড়া মেশিন মেরামতে রাজি হচ্ছে না। আর এ চুক্তির জন্য তারা মেশিনের মূল্যের ১০ থেকে ১২ শতাংশ ফি দাবি করে আসছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী এ চুক্তির ফি হিসেবে মেশিনের মূল্যের সর্বোচ্চ ৬.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা আছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়, সিএমএসডি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে দিনের পর দিন দর কষাকষি চললেও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে অচল থাকা ভারি যন্ত্রপাতিগুলো মেরামতের জটিলতাও কাটেনি। তবে এ জটিলতা কাটাতে এবার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এ সংক্রান্ত ৭ সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ২৮ মে মন্ত্রণালয়ের গঠিত সিএমসি সংক্রান্ত কমিটির এক সভায় এ উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল হক খান এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সিএমএসডির পরিচালককে এ উপকমিটির আহবায়ক করা হয়েছে। সদস্য সচিব করা হয়েছে নিমিউএন্ডটিসির চীফ টেকনিক্যাল ম্যানেজারকে। এছাড়া মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালককে কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে।

চুক্তির (সিএমসি) জটিলতা কাটাতে সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে একাধিক সুপারিশ করবে এ উপকমিটি। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছেউপকমিটি বিদ্যমান সিএমসি পরিপত্র জারির পূর্বে ক্রয়কৃত যন্ত্রপাতিসমূহের মধ্যে শুধু পরিপত্রের নির্ধারিত দর বহির্ভূত মেরামত প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিসমূহের টেন্ডার ডকুমেন্টস/ক্রয় চুক্তি ও বর্তমান প্রস্তাব পরীক্ষানিরীক্ষা করবে। এছাড়া হাসপাতাল/সিএমএসডি থেকে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রের টেন্ডার ডকুমেন্টস/ক্রয়চুক্তির তথ্য, বর্তমান প্রস্তাব এবং যন্ত্রপাতি সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি ছক আকারে সংগ্রহ করে বিস্তারিত পর্যালোচনাপূর্বক সিএমসি সংক্রান্ত বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে যৌক্তিকতা উল্লেখপূর্বক বাস্তবসম্মত একাধিক বিকল্প সুপারিশ দাখিল করবে। ভারি যন্ত্রপাতিগুলোর মেরামতের জটিলতা কাটাতে দীর্ঘদিন পর হলেও মন্ত্রণালয়ের এমন উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। মন্ত্রণালয়ের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে এবার ভারি যন্ত্রপাতিগুলোর মেরামতের জটিলতা নিরসন হবে বলে আশা করছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।

তবে মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগের পর ভারি যন্ত্রপাতিগুলো সচল হতে আরো কতদিন লাগে, এখন সেটাই দেখার বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছাদখোলা বাসে সমুদ্র দর্শন
পরবর্তী নিবন্ধদিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি, কমেছে তাপমাত্রা