সভাপতি আবদুল মতিন খসরুর শূন্য পদ পূরণে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে এখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই পক্ষ। সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগ সমর্থক অংশ সভাপতি হিসেবে এ এম আমিন উদ্দিনের নাম ঘোষণাকে যথাযথ দাবি করলেও একে গঠনতন্ত্রবিরোধী বলছে বিএনপি সমর্থকরা। মতিন খসরুর মৃত্যুতে সমিতির সভাপতি পদটি শূন্য হয়। তা পূরণে মঙ্গলবার বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করেছিলেন সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল। কিন্তু সভায় সভাপতিত্ব কে করবেন তা নিয়ে হট্টগোলের এক পর্যয়ে সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা সমিতির সভাপতি হিসেবে আমিন উদ্দিনের নাম ঘোষণা করেন, যা কণ্ঠভোটে সভায় পাস হয়েছে বলে দাবি করছেন তিনি। অন্যদিকে সমিতির সম্পাদক বলছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশেষ সাধারণ সভাটি মুলতবি করা হয়েছে। এরপর গতকাল বুধবার দুপুরে সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে সমিতির আওয়ামী ও বিএনপি সমর্থক অংশ। খবর বিডিনিউজের।
এবারের নির্বাচনে কার্যনির্বাহী কমিটিতে সভাপতিসহ আটটি পদে জয়ী হয়েছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল। অন্যদিকে সম্পাদকসহ ছয়টি পদে জয়ী হয় বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল। গতকাল প্রথমে বিএনপি সমর্থক অংশের সংবাদ সম্মেলন থেকে দাবি করা হয়, সভাপতি হিসেবে আমিন উদ্দিনের নাম ঘোষণা গঠনতন্ত্রবিরোধী। পরে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সমর্থক অংশ দাবি করে, গঠনতন্ত্রের ১৬ ধারা অনুযায়ী সভাপতি পদে যেভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে, তা যথাযথ। সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ সাধারণ সভা মুলতবি করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছিল সভাপতি পদ পূরণে করণীয় নির্ধারণের জন্য, নির্বাচনের জন্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, সভা মুলতবি করার পর সমিতির সাবেক সভাপতি, সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে বসে করণীয় নির্ধারণ করে নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতির পদ পূরণ করার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ্য করলাম, কার্যকরী কমিটির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা অতি উৎসাহী হয়ে সমিতির সাবেক সভাপতিকে ২০২১-২২ সালের বাকি মেয়াদের জন্য সভাপতি ঘোষণা করেন।
কাজল বলেন, এ ঘটনা প্রমাণ করে ভোট ছাড়া ক্ষমতা দখলের যে চর্চা রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনরা চালু করেছে, এ ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা। এর মধ্যদিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হল; যেটি সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসাবে কখনই আমাদের কাম্য ছিল না। উদ্ভূত এ পরিস্থিতি বা অচলাবস্থা নিরসনে কাজল সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান। বিএনপি সমর্থক অংশের সংবাদ সম্মেলনের পরপরই সমিতির সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগ সমর্থক অংশ।
এ সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সহ-সভাপতি শফিক উল্ল্যাহ বলেন, গঠনতন্ত্রের ১৬ ধারা অনুযায়ী সভাপতি পদে যেভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে, তা যথাযথ। বিশেষ সাধারণ সভায় এ এম আমিন উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করা হয়, সেখানে অন্য কারও নাম উচ্চারণ না হওয়ায় তিনি সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এ পর্যায়ে ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সুযোগ গঠনতন্ত্রে নেই।
গত ১০-১১ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের ভোটে সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী মতিন খসরু। আর রুহুল কুদ্দুস কাজল টানা দ্বিতীয়বার সম্পাদক নির্বাচিত হন। গত ১২ এপ্রিল নির্বাচিত কমিটির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মতিন খসরু হাসপাতালে থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৪ এপ্রিল মারা যান। এরপর সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৬ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে সভাপতির শূন্যপদ পূরণের করণীয় নির্ধারণ করতে গত ২৭ এপ্রিল বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করেছিলেন সম্পাদক কাজল, যা হট্টগোলের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল।