নগরীতে স্থায়ী গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় প্রধান প্রধান সড়কের দুই পাশে রাখা হচ্ছে সারি সারি গাড়ি। নগরীর প্রধান সড়কের আগ্রাবাদ থেকে দেওয়ান হাট, মুরাদপুর থেকে বহদ্দার হাট, জুবিলী রোড, স্টেশন রোড, নিউমার্কেট, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, লালদীঘির পাড়, দামপাড়া, প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, আসদগঞ্জ, খাতুনগঞ্জসহ বেশিরভাগ এলাকায় সড়কেই গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে। আবার স্কুলের শিক্ষার্থীদের আনা নেওয়ার জন্য গাড়ির ভিড়েও অনেক এলাকায় সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া স্টেডিয়াম সংলগ্ন রাস্তার দুইপাশ, তিনপোলের মাথা, আমতল থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত সারি সারি গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে প্রতিনিয়ত যানজট হচ্ছে।
গতকাল রোববার দুপুরে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ পুনরায় অবৈধ পার্কিয়ের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, মার্কেট কেন্দ্রীক যানজট নিরসনে সড়কে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা?
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর সড়কগুলোতে যেখানে সেখানে গাড়ি পার্ক করা। পুরো নগরীতে গাড়ি পার্ক করার তেমন জায়গা নেই। সড়কই যেন সব গাড়ির নিরাপদ পার্কিং। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যানজট। একপর্যায়ে যানজটে কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। একদিকে প্রচন্ড গরম তার ওপর তীব্র যানজটে হাঁপিয়ে উঠছে রোজাদারগণ। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বরতদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে বসছে এমন পার্কিং। সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মানুষের মুখে মুখেই ছড়িয়েছে এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ। ট্রাফিক পুলিশের প্রতিটি সদস্য এবং সার্জেন্টরা সার্বক্ষণিক যানজট নিরসনে কাজ করছে। অবৈধ পার্কিং করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরও এ অপরাধ বন্ধ করা যাচ্ছে না।
নগরীতে নেই কোনো স্থায়ী বাস টার্মিনাল। সড়ক ও রাস্তাঘাট দখল করে বাস রাখা হচ্ছে। সড়কের পাশে টিকিট কাউন্টার। সেখানে বাস দাঁড় করিয়ে দূরপাল্লার বাসের যাত্রী উঠা-নামা করা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর নগরীর কদমতলী, দামপাড়া, স্টেশন রোড, বড়পুল, সরাইপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় দূরপাল্লার বাস এনে রাখা হয় রাস্তায়। বাসের সারির কারণে এসব এলাকায় যানজট হচ্ছে।
সিএমপির টিআই কোতোয়ালী মো. মশিউর রহমান আজাদীকে বলেন, শহর এলাকার বাসগুলো নির্দিষ্ট স্টপেজ বানিয়ে ফেলেছে নিউমার্কেট এলাকাকে। এখান থেকেই ছাড়ে, এখানেই এসে থামে। তাছাড়া অবৈধ পার্কিং করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
নগরীর যেখানে সেখানে বিশেষ করে রাস্তার দু’পাশে, মার্কেট বা শপিংমলের সামনে গাড়ি পার্কিং সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব জায়গায় গাড়ি রাখা বৈধ ও সঙ্গত না হলেও এই কারবারটি দিব্যি চলছে। ভবন ও মার্কেটের নিজস্ব পার্কিং প্লেস থাকার কথা, সেখানে ভবন ও মার্কেট সংশ্লিষ্ট গাড়িগুলো রাখা যেতে পারে। যেসব মার্কেট বা শপিংমলে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে, সেখানেও দেখা যায়, প্রয়োজনের তুলনায় পার্কিং প্লেস ছোট বা অপরিসর। এমতাবস্থায়, ভবন বা মার্কেট সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ গাড়ি রাস্তার পাশে ও ভবন-মার্কেটের সামনে পার্ক করে রাখা হয়। রাস্তায় এভাবে যত্রতত্র পার্কিং ও ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকান দেওয়ায় নগর জুড়ে এক অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক দখল করে অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে বাস, ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি, হিউম্যান হলার, রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি টেঙি। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।
নগরীর কাজীর দেউড়ি টু লাভলেইন এলাকায় অবৈধ পার্কিং নিয়ে রীতিমতো বাণিজ্য চলছে। তিন সদস্যের একটি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সড়কটি। এক কিলোমিটার সড়কজুড়ে পার্কিং বাণিজ্যকে পুঁজি করেই গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজির বিশাল খাত। সড়কটির অধিকাংশই দখলদারদের কবলে চলে গেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করলেও পর্যাপ্ত ট্রাক টার্মিনাল নেই। এ কারণে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি সড়ক ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের দখলে থাকে। নিউ মার্কেট হচ্ছে চট্টগ্রামের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা। পর্যাপ্ত ও প্রশস্ত রাস্তা থাকলেও, তার অনেকটাই হকারদের দখলে। নগরীর নিউ মার্কেট-কদমতলীর মত ব্যস্ত সড়কটিও বাদ নেই অবৈধ গাড়ি পার্কিং আর হকারদের দখল থেকে। এ সড়কের দু’পাশে দিনভর অসংখ্য গাড়ি পার্ক করে রাখার কারণে গাড়ি চলাচলের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়।
চকবাজার এলাকায় গাড়ি এবং স্ট্যান্ড নিয়ে বিড়ম্বনার যেন শেষ নেই। চকবাজারের বিভিন্ন স্পটে গড়ে ওঠেছে একাধিক পরিবহন স্টেশন। কেয়ারির সামনে থেকে মাহিন্দ্র, গোলজার মোড় থেকে টুকটুকি ও অলি খাঁ মোড় থেকে টেম্পো স্টেশন। তাদের যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, যাত্রী ওঠানামা সবমিলিয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ শিক্ষা জোন খ্যাত চকবাজার থানা এলাকায়। এদিকে, পরিবহন স্টেশন, ফুটপাতে দোকানসহ বিভিন্ন খাত থেকে পুলিশের নাম ভাঙিয়েও চলে চাঁদাবাজি। সবকিছু মিলে বিশৃংখল এক পরিবহন দৌরাত্ম্য পুরো এলাকাজুড়ে।
স্টেশন রোডের ফলমন্ডি এলাকায় একজন পথচারীর সঙ্গে কথা হলে যানজট প্রসঙ্গে তিনি জানান, অবৈধভাবে রাস্তায় গাড়ি পার্কিংয়ের কারণেই যানজট হচ্ছে। রাস্তায় অবৈধভাবে পার্কিং করায় দ্রুতগতির গাড়ি চলতে পারে না। সড়কের দুই তৃতীয়াংশ জায়গা মিনি ট্রাক ও সিএনজি টেঙির দখলে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নিউমার্কেট থেকে কদমতলী মোড় পর্যন্ত হকার ও রাস্তার পাশে রাখা হয়েছে মিনি ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন। ফলে অসহনীয় যানজটের পড়ছে সাধারণ মানুষ। ছিনতাইও হয় প্রায় সময়।
নগরীর দেওয়ানহাট থেকে চৌমুহনী পর্যন্ত শেখ মুজির রোড। ব্যস্ততম এ সড়কের দুইপাশে যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করেন ব্যবসায়ী-চাকরীজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। সৃষ্টি করেন যানজট। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো বিকার নেই তাদের। যেন অবৈধ পার্কিংই বৈধ তাদের কাছে। নগরীর শেখ মুজিব রোড ঘুরে দেখা গেছে অবৈধ পার্কিংয়ের এমন চিত্র। সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার উভয়পাশে অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা হয়েছে সিএনজি, বাস, প্রাইভেট কার, রিকশা, ভ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। এছাড়া আছে টংসহ ছোটখাট কিছু দোকানপাট।
এ প্রসঙ্গে সিএমপির টিআই (প্রসিকিউশন-পশ্চিম) বিপ্লব কুমার আজাদীকে বলেন, আজও (রোববার) অবৈধ পার্কিং করা যানবাহনের বিরুদ্ধে ২৬ টি মামলা হয়েছে। আমরা নিয়মিত মামলা জরিমানা করছি। আর পার্কিং করা গাড়ির চালক না থাকলে সেই গাড়ি রেকার দিয়ে টেনে ডাম্পিংয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
অলংকার, একে খান মোড়ে কোনো টার্মিনাল না থাকায় সেটা অলিখিত বাস স্টেশন হয়ে গেছে। সেখানে বিভিন্ন যাত্রীরা উঠানামা করার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়।