দশ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়ানোর সিদ্ধান্ত আসছে

সক্ষমতা যাচাই প্রতিবেদন ২৪ এপ্রিল

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৮ এপ্রিল, ২০২২ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দরের ড্রাফট প্রত্যাশা ছুঁতে যাচ্ছে। দশ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ বন্দরে ভিড়ানোর সিদ্ধান্ত আসছে। চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলের এ সক্ষমতা যাচাই নিয়ে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা করছে একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান। মূলত তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে বন্দরের ড্রাফট এবং লেংথ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। আগামী ২৪ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের এইচ আর ওয়েলিং পোর্ট নামের কোম্পানির সার্ভে রিপোর্ট উপস্থাপনের পর এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ড্রাফট এবং লেংথ বৃদ্ধি পেলে চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়ার সুবিধাসহ আমদানি রপ্তানি পণ্য পরিবহনে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে পারে না এমন বহু জাহাজও এই বন্দরের জেটিতে নোঙর ফেলবে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে বর্তমানে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফট এবং ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে এই ড্রাফট এবং লেংথ বাড়ানো হয়েছিল। এর আগে তুলনামূলকভাবে আরো ছোট জাহাজ বন্দরে ভিড়তো। চট্টগ্রামের শিপিং ব্যবসা এবং আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে জড়িতরা দীর্ঘদিন ধরে বন্দরের লেংথ এবং ড্রাফট বাড়ানোর ব্যাপারে দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ সুনিশ্চিত না হয়ে হুট করে ড্রাফট বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ লন্ডনে এইচআর ওয়েলিং পোর্ট নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে কর্ণফুলী নদী এবং বন্দর চ্যানেলে গবেষণার দায়িত্ব দেয়। গত জানুয়ারিতে এই কোম্পানির গবেষণা রিপোর্ট দেয়ার কথা। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত তাদের হাতে সময় রয়েছে। তবে আগামী ২৪ এপ্রিল বিদেশী এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের সার্ভে রিপোর্ট উপস্থাপন করবে। ইতোমধ্যে তারা মৌখিকভাবে বন্দরের কর্মকর্তাদের জানিয়েছে যে, বন্দর চ্যানেলে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার লেংথের জাহাজ অনায়াসে ভিড়ানো যাবে।
বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান যে রিপোর্ট উপস্থাপন করবে তাতে আমাদের কিছু কোয়ারি আছে। এগুলো ঠিকঠাক থাকলে আমরা ড্রাফট এবং লেংথ বাড়ানোর ঘোষণা দেবো। তবে সাড়ে দশ মিটার না করে আমরা ড্রাফট ১০ মিটার করবো। তবে বন্দরের ১৮টি জেটিতে একই ড্রাফট থাকবে না। নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালে (সিসিটি) ১০ মিটার ড্রাফট দেয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) কয়েকটিতে ড্রাফট বাড়ানো যাবে। বন্দরের জিসিবি’র ২ থেকে ৮ নম্বর জেটিতে বর্তমানে সাড়ে আট মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়ানো যায়। সেখানে ড্রাফট কিছুটা বাড়ানো গেলেও ১০ মিটার করা যাবে না। তবে ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটিতে ড্রাফট ১০ মিটার করা সম্ভব হবে। জিসিবির ৬টি জেটিতে কন্টেনার জাহাজ ভিড়ে। সেখানে ১০ মিটার ড্রাফট করা সম্ভব হবে।
২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ বন্দরে ভিড়ানো সম্ভব হলে কন্টেনার পরিবহনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯০ মিটার লম্বা এবং সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটে ১৬শ’ থেকে ১৭শ’ টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারে। ২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজে ২৭শ’ থেকে ২৮শ’ টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে। যা বন্দরের কন্টেনার পরিবহন এবং হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বড় জাহাজে পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হলে পরিবহন ব্যয় বহুলাংশে কমে আসবে বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে।
সংশ্লিষ্ট শিপিং ব্যবসায়ীরা বন্দরের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের চাহিদা যে হারে বাড়ছে তাতে বড় জাহাজ আসা সম্ভব হলে তা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার আরিফুর রহমান আগামী ২৪ এপ্রিল রিপোর্ট উপস্থাপনের পর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে বলে জানান। তিনি বলেন, বিভিন্নভাবে ড্রেজিংয়ের ফলে বন্দর চ্যানেলের গভীরতা বেড়েছে। তাছাড়া আমরা বিভিন্ন ধরনের শক্তিশালী টাগ সংগ্রহ করেছি। যাতে যে কোনো ধরনের রিস্ক আগের চেয়ে অনেক বেশি কাভারের সক্ষমতা বন্দরের রয়েছে। ড্রাফট ও লেংথ বাড়ালে শুধু বন্দরই নয়, দেশের সার্বিক ব্যবসা বাণিজ্য লাভবান হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসড়কই যেন সব গাড়ির নিরাপদ পার্কিং
পরবর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত