ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বলে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে। গত ১৯ মে প্রকাশিত ‘চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বর্ষা আতঙ্ক, স্লুইচগেটের নির্মাণ দ্রুত শেষ করার দাবি ব্যবসায়ীদের’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্ষায় নদী-খাল পানিতে টইটম্বুর থাকে। তার সাথে যুক্ত হয় জোয়ারের পানি। দেখা যায়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায়ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নিম্নাঞ্চল। তবে গত প্রায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে নির্মাণাধীন জোয়ারের পানি প্রতিরোধক স্লুইচগেটের কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় দোকান-গুদামের প্রবেশমুখও উঁচু করেন। কিন্তু প্রতি বছরই বাড়ে জোয়ারের পানির উচ্চতা। তবে শেষ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হয়নি। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চাক্তাই ও রাজাখালী খালে জোয়ারের পানি প্রতিরোধে স্লুইচগেট নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করে। উদ্বোধনের প্রায় তিন বছরেও কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। উল্টো স্লুইচগেট নির্মাণের জন্য কর্ণফুলীর মোহনায় চাক্তাই খাল ও রাজাখালী খালের একাংশ ভরাট করা হয়েছে। আগামী বর্ষার আগে ভরাট করা অংশ কেটে দেওয়া না হলে চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে-এমন আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের ন্যাশনাল রেসিলিয়েন্স প্রোগ্রামের (এনআরপি) যৌথ উদ্যোগে এবং ইউএনডিপির সহযোগিতায় আয়োজিত এক সেমিনারে এ সমস্যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় এবং সমাধানের জন্য সম্ভাব্য সুপারিশ প্রদান করা হয়। বক্তারা বলেছিলেন, ভোগ্যপণ্যের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিককেন্দ্র খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে চাক্তাই-বদরখালীসহ বিভিন্ন খাল দখলমুক্ত করা, পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা, ময়লা আবর্জনা-বর্জ্য ফেলে খাল ভরাট প্রতিরোধ করা এবং কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং কাজ নিয়মিত তদারকি করা প্রয়োজন। সেমিনারে দেশের ঐতিহাসিক পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণ, অর্থনৈতিক প্রভাব ও প্রতিকার বিষয়ে ‘স্টাডি অন ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট অব ওয়াটারলগিং অন লোকাল ট্রেড: দ্য কেইস অব খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়েছিল। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সিটি করপোরেশন, সিডিএ, চিটাগং চেম্বারসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে বলে বক্তারা অভিমত প্রকাশ করেন।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় যে, ৩০০-৪০০ বছরের পুরনো এবং প্রায় ২৫০ বছর আগে নামকরণকৃত খাতুনগঞ্জে ২০০৪ সাল থেকে জলাবদ্ধতার কারণে দোকান ও গুদামের মালামাল নষ্ট হয়ে শত শত কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। চাক্তাই খালকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বারোপ করেছেন।
চট্টগ্রাম বন্দর তথা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং করা, নালা নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা, চাক্তাই খালকে নৌচলাচলের উপযোগীকরণ, খালের মাটি দ্রুত উত্তোলন ও গভীরতা নিশ্চিত করা, খালের দুই পাড়ে রাস্তা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, মিঠা পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনেরও দরকার রয়েছে বলে তাঁরা উল্লেখ করেন।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চাক্তাই ও রাজাখালী খালে জোয়ারের পানি প্রতিরোধে স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হলেও গত তিন বছরেও কাজের তেমন অগ্রগতি না হওয়া দুঃখজনক। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন স্লুইচগেট ও রেগুলেটরগুলো নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই মিলবে না। এ ছাড়া ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান সময় মতো বাস্তবায়ন করা হলে এই দুর্ভোগ এত চরম আকার ধারণ করত না। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে এই সমস্যা সমাধান করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সিডিএ, বন্দরসহ সব সেবা সংস্থার সমন্বয়ে একটি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। জোয়ারের পানি থেকে মুক্তি পেতে স্লুইচগেটের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।