অগ্নিঝরা মার্চ, স্বাধীনতার মাস, বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের মাস। এই মাস বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সাক্ষী। চলতি বছরের ২৬ মার্চেই বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫১ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে। আমাদের স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত সংগ্রাম শুরু হয়েছিল এ মার্চ মাসেই। ১৯৭১ সালের এ মাসের ২৬ শে মার্চ থেকে বাঙালি জাতি পাকিস্তানি দখলদার হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলে।
পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৫ মার্চ রাতে কামান, মর্টার, রাইফেল নিয়ে ঘুমন্ত নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অতর্কিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে অপারেশন সার্চলাইট নামে এক নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো। অপারেশনটির আসল উদ্দেশ্য ছিল ২৬ শে মার্চের মধ্যে সব বড় বড় শহর দখল করে নেয়া এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের মধ্যে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। কিন্তু তাদের সমস্ত পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়। ঐ সময় ২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতার হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। যা চট্টগ্রামে অবস্থিত তৎকালীন ই.পি.আর ট্রান্সমিটারে প্রচারের জন্য পাঠানো হলো। বাংলার মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর সর্বশেষ বাণী ছিল ‘”এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা,আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আপনারা যে যেখানেই থেকে থাকুন, যে অবস্থায়ই থাকুন, যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলুন। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটি উৎখাত না হওয়া পর্যন্ত এবং চুড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে”। এ ঘোষণার পর, ২৬ শে মার্চ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা এম. এ হান্নান প্রথম শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেন। পরের দিন (২৭ শে মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাঙালী সামরিক অফিসার হিসেব মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মূলত এটিই ছিলো স্বাধীনতার অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের পর থেকেই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করে বীর বাঙালি।
ঢাকাসহ গোটা দেশে পত পত করে উড়তে শুরু করে সবুজ ভূ-খণ্ডের উপর লাল সূর্য আর সবুজ মানচিত্রের পতাকা। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট নামে নিরস্ত্র বাঙালির উপর গণহত্যাযজ্ঞ চালায়। রক্তের বন্যা বইয়ে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীজুড়ে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ শুরু করে প্রায় ৫০০০০ নরনারী প্রাণ হারায়। এ অন্যায়ের প্রতিরোধেই শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। ৩০ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে দীর্ঘ ৯ মাস পর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয়ের নতুন সূর্য স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বিশ্বের মানচিত্রে খন্ডিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র বাংলাদেশ।