স্বঘোষিত ভিআইপি!

ব্যক্তিগত গাড়িতে সাইরেন হুটার, ছড়াচ্ছে আতঙ্ক

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৪ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

যানজটের মধ্যেও দামি গাড়িতে চড়ে সাইরেন ও হুটার বাজানো স্বঘোষিত ভিআইপিদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। তারা উচ্চস্বরে সাইরেন ও হুটারযুক্ত গাড়ি হাঁকিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন। কেউ কেউ আবার অবৈধভাবে নিজ গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ব্যবহার করছেন। এছাড়া নগরীর উঠতি বয়সী ধনীর দুলালেরা রাত নামতেই সাইলেন্সার ছাড়া পাইপ ও ডিজিটাল হর্ন বাজিয়ে বিকট শব্দ করে গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মোটরযান আইনে শাস্তির পরিমাণ কম হওয়ায় এখন অনেকে গাড়িতে সাইরেনযুক্ত হর্ন, হুটার ও বিকট শব্দ তৈরি করে গাড়ি চালাচ্ছেন। সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের উত্তর জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই-প্রশাসন) মো. মশিউর রহমান আজাদীকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ছাড়া কারোরই সাইরেনযুক্ত হর্ন ব্যবহার করার কথা নয়। সাইরেনের শব্দ শুনলে মানুষ ওইসব বাহনকে দ্রুত চলাচলের সুযোগ করে দেয়। অথচ এই বিশেষ হর্ন এখন অনেক সাধারণ গাড়িতে দেখা যাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন শব্দদূষণ বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের সময়ের গুরুত্বকে করছে অবজ্ঞা। আমরা এসব গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি, মামলা দিচ্ছি, জরিমানা আদায় করছি। অনেক সময় গাড়ি টো করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ দৌরাত্ম্য বন্ধে আরো কঠোর হতে হলে, তাও হব।
সিএমপির দক্ষিণ জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই-প্রশাসন) মো. মহিউদ্দিন আজাদীকে বলেন, আগে সাইরেন ব্যবহার করা হতো শুধু অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, পুলিশের পিকআপসহ অতি প্রয়োজনীয় ও জরুরি কাজে নিয়োজিত বিশেষ কিছু সরকারি গাড়িতে। এখন অনেকেই গাড়িতে সাইরেন বা হুটার ব্যবহার করছেন। আমরা অভিযান চালিয়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। মামলা, আটকের পাশাপাশি গাড়ির মালিক ও চালক থেকে মুচলেকাও নেওয়া হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে গাড়িতে সাইরেন বা হুটার জাতীয় কোনো হর্ন না লাগায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বঘোষিত এই ভিআইপিরা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নিজেদের গাড়ির হর্নের সঙ্গে এই সাইরেন যুক্ত করে দিচ্ছেন। মন্ত্রীদের গাড়িতে যে ধরনের হর্ন থাকে এই ভিআইপি নামধারীরাও তেমন সাইরেনযুক্ত গাড়ি ব্যবহার করছেন। দিন দিন এ ধরনের ব্যক্তিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক সময় এই সাইরেনযুক্ত গাড়ি দেখে সেই গাড়িটিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সাইড দিয়ে দেন সামনের গাড়িগুলো। কিন্তু পরে দেখা যায়, যাকে সাইড দেওয়া হয়েছে তিনি আসলে স্বঘোষিত ভিআইপি।
বিধি অনুযায়ী, দেশে উল্টো পথে চলা বা সাইরেন বাজিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে কোনো ভিআইপির চলাচল অনুমোদিত নয়। শুধু মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় রাস্তার এক পাশ ফাঁকা করে চলাচলের বিধান রয়েছে। তবুও সেক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের স্বঘোষিত নব্য ভিআইপিরা রাস্তাঘাটে ট্রাফিক পুলিশের মনঃসংযোগ করতে বা সামনের গাড়ি থেকে সহজে সাইড পাওয়ার বাড়তি সুবিধার আশায় এবং উল্টো পথে চলাচলের সুবিধা নিতে ব্যক্তিগত গাড়িতে সাইরেন ও হুটার সংযোজন করছে।
২ নভেম্বর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাকলিয়া মিয়াখান নগর এলাকায় প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে একটি কালো পাজেরো গাড়ি দেখা যায়, যেটির চালক অনবরত সাইরেন ও হুটার বাজিয়ে চলেছেন। কোনো ভিআইপির গাড়ি ভেবে সামনের গাড়িগুলোর মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। সাইড দেওয়ার পর গাড়িটি যখন বেরিয়ে যায়, দেখা যায়, চালক ছাড়া ওই গাড়িতে আর কেউ নেই। অন্যান্য গাড়ির চালকরা শুরু করলেন গালাগালি। সাইড পেয়ে গাড়িটি ততক্ষণে চলে গেছে বহুদূর।
একই দৃশ্য দেখা গেল গতকাল বিকেল ৪টায়। নিউ মার্কেটের দিক থেকে রেলস্টেশন অভিমুখে যাচ্ছিল সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার ও সিলভার রঙের একটি মাইক্রোবাস। সামনে যথারীতি রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে আছে সিটি সার্ভিসের তিনটি বাস। পেছন থেকে এ দুটি গাড়ি কখনো সাইরেন দিতে থাকে, কখনো হুটারের শব্দ করে। ঠিকই কার্যসিদ্ধি হলো তাদের। বাসগুলো সাইড দিল। গাড়ি দুটি শাঁ করে বেরিয়ে গেল।
সমপ্রতি নগরীতে আরেকটি গ্রুপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই গ্রুপটি ব্যক্তিগত গাড়িতে সাইলেন্সার পাইপ ছাড়া বিকট শব্দ তৈরি করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এদের কেউ কেউ আবার জীবজন্তুর অদ্ভুত আওয়াজের ডিজিটাল হর্ন ব্যবহার করে। রাস্তায় চলন্ত গাড়ির ঠিক পেছনে পৌঁছেই এসব বিকট শব্দ ছড়ানো হর্ন বাজিয়ে সামনের গাড়ির চালককে তটস্থ করে দিচ্ছে। বিশেষ করে বিত্তশালী পরিবারের উঠতি বয়সের তরুণরা এ ধরনের গাড়িগুলো চালিয়ে বা রেস করে বিকৃত আনন্দ খুঁজে পায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদ্যুতের খুঁটি ও পাহাড়ে রক্ষা
পরবর্তী নিবন্ধচালের দাম ফের বাড়ছে