গত প্রায় দুই মাস ধরে অচল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। এসময় কোনো ধরনের ক্লাস–পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বর্তমানে ক্যাম্পাসে প্রশাসন না থাকায় কবে কখন ক্লাস–পরীক্ষা শুরু হয় তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে সেশনজটে পড়ার তীব্র আশঙ্কায় রয়েছেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণ অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে সরকার পতন হয়। এরপর একে একে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। দাবির মুখে ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের পদত্যাগ করেন। এছাড়া দুই উপ–উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি, সকল হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। এর মধ্য দিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এক প্রকার অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে। দুই সপ্তাহ পেরোলেও নতুন প্রশাসন নিয়োগ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানান অনিশ্চয়তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জুলাই–আগস্ট থেকেই বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা আরম্ভের কথা ছিল। তবে দেশজুড়ে কোটা আন্দোলনে ঘিরে নানান অস্থিরতায় পরীক্ষার টেবিলে বসতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। এতে করে সেশনজটের শঙ্কায় আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবকটি বিভাগ।
এ বিষয়ে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ হাসান অভি বলেন, দীর্ঘ দুই মাসের চলমান আন্দোলন–সংগ্রামের কারণে অনেক বিভাগেরই পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে সেশনজটের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রামিসা নাওয়াল নাবিলা বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যেখানে সবকিছুকেই স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চলছে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ কেন? খুব দ্রুতই একজন উপযুক্ত ভিসি নিয়োগের পাশাপাশি একাডেমিক এবং প্রসাশনিক কাজকর্ম স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আমরা আশা করি।
এদিকে হলগুলো খুলে না দেওয়ায় বাড়িতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা পড়েছেন দুটানায়। হলে সিট বরাদ্দ হলে সিট পাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন অনেকে। প্রশাসনিক এই সংকট আরও দীর্ঘস্থায়ী হয় কিনা তা নিয়েও সন্দিহান তারা। চবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মুরাদ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও উপ–উপাচার্যদের পদত্যাগের পর ক্যাম্পাসে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। প্রশাসনিক সংকটের কারণে শিক্ষাক্রম দীর্ঘদিন স্থবির হয়ে পড়ে আছে। ক্যাম্পাস কবে খুলবে, শিক্ষাক্রম কেমন হবে, এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অস্পষ্ট। শিক্ষার্থীদের অমূল্য সময় নষ্ট হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় রাসেল আহমেদ বলেন, সারা বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। একটা ক্রান্তিকালীন সময় কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আমরা আরেকটা ক্রান্তিকালীন সময় পার করছি। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যেহেতু বড় ভূমিকা পালন করছে তাই সংকট কাটিয়ে উঠতে সময় লাগছে। আশা করি খুব দ্রুতই আমাদের শিক্ষা–কার্যক্রম শুরু হবে।
হলে ওঠার বিষয়ে এই সমন্বয়ক বলেন, সবাই চাচ্ছে হলে সিট বরাদ্দ যেন সিস্টেমেটিক ওয়েতে হয়। যার মাধ্যমে এতোদিন যে লেজুড়বৃত্তিক, দখলদার ভিত্তিক ব্যবস্থা ছিল সেটা যেন আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি। সে নিরিখেই আমরা প্রশাসন নিয়োগের দিকে তাকিয়ে আছি। বর্তমান উপদেষ্টাদের সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ আজাদীকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন আসার আগে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব না। নতুন প্রশাসন কখন আসবে সেটা জানি না। তবে শুনেছি এই সপ্তাহে আসতে পারে।